৫ বছরের শিশু তানিশাকে হত্যায় সৎ মায়ের মৃত্যুদণ্ড

খুলনা ব্যুরো: খুলনার তেরখাদায় ৫ বছরের শিশু তানিশা হত্যা মামলায় সৎ মা তিথী আক্তার মুক্তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জ‌রিমানা দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার (১৫ নভেম্বর) খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, তিথী আক্তার মুক্তা স্বামী খাজা শেখের অবর্তমানে প্রায়ই মোবাইল ফোন, ম্যাসেঞ্জার ও ইমোতে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলত। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও ঝগড়া লেগে থাকত। ফারাবী প্রসেনজিৎ নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভয়েস চ্যাটিংয়ের বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব একপর্যায়ে চরম আকারে পৌঁছে যায়।
২০২১ সালের ২ এপ্রিল ইমোতে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এতে স্বামী খাজা শেখ তাকে তালাকের হুমকিও দেয়। পরে ইমোতে খাজা তার মেয়েকে আদর সোহাগ করে ডাকতে থাকে। এ নিয়ে মুক্তার মধ্যে জ্বালা যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে তানিশাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে মুক্তা।
এদিকে তানিশা রাতে মুক্তার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতো। ঘটনার দিন (০৬ এপ্রিল) রাতে তাদের মধ্যে আবারও ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে খাজা শেখ এলাকায় বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। স্বামীকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুক্তা এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
জবানবন্দিতে তিনি আরও জানায়, ওই দিন রাতে বারান্দায় সেলাই মেশিনের ওপর একটি দা নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে মুক্তা। সে সময় তানিশা খাটে ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমন্ত তানিশাকে দা দিয়ে গলায় ও মাথায় কুপিয়ে জখম করে। দাপা দাপির শব্দ শুনতে পেয়ে দাদী ও চাচা এগিয়ে এলে দরজা খুলে ঘরের বাইরে চলে আসে মুক্তা। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুক্তাকে আটক করে। জব্দ করা হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা।
এদিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তানিশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে নিহতের দাদা বাদি হয়ে তিথী আক্তার মুক্তাকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ বছরের ৩১ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম তিথী আক্তার মুক্তাকে আসামী করে এ হত্যা মামলা চার্জশিট দাখিল করেন। আদালতে মোট ২২ জন স্বাক্ষ্য দিয়েছেন।
নিহত তানিশার বাবা তেরখাদার আড়কান্দী গ্রামের খাজা শেখ বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়নে কর্মরত। তিনি সাত বছর আগে একই উপজেলার আক্কাস শেখের মেয়ে তাসলিমাকে বিয়ে করেছিলেন। পরে দাম্পত্য কলহের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। আর দেড় বছর আগে মুক্তা বেগমকে বিয়ে করেন খাজা শেখ।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.