৩ বছরের চার্জশীটভুক্ত আসামী ইঞ্জিনিয়ারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন না আরডিএ চেয়ারম্যান!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান। ২০০৪ সালে নিয়োগ প্রাপ্তিসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ। এমনকি তিনি ৩ বছর যাবত চার্জশীটভূক্ত আসামী হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না আরডিএ চেয়ারম্যান। এনিয়ে দুদকসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে বারং বার পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে তাগাদা দিলেও কর্তৃপক্ষ রয়েছেন উদাসীন।
অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে তিনি রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে অদ্যবধি স্বপদে বহাল রয়েছেন। শুধু তাই নয়- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দুদক ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও চার্জশীটভূক্ত আসামী হওয়ার পরও রাজশাহীর বড় বড় প্রকল্পেগুলোও তার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে যা আইনসঙ্গত নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট ১০টি পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ওই নিয়োগে সহকারী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেন তদকালীন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও আরএডি এর চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান ও তদকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব মুহা. আব্দুর রব জোয়ার্দার। ২০০৭ সালে গণপূর্ত অডিট অধিদপ্তর এহেন বিধি-বহির্ভূত নিয়োগের আপত্তি জানায়। এনিয়ে ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি তদকালীন দুদকের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল করিম চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নিয়োগ প্রার্থীর নামে একটি মামলা দায়ের করেন।
সূত্র আরও জানায়, পরতবর্তীতে এনিয়ে তদকালীন আরডিএ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিবুল ইসলাম আইন মন্ত্রনালয়ে একটি মতামত চেয়ে চিঠি প্রেরণ করেন। পত্রে উল্লেখ করেন- অভিযুক্তদের বেতন, ছুটি, গ্যাচুইয়িটি, পেনশনসহ ইত্যাদি দেওয়া যাবে কি না? তদপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত চিটিতে ওই মতামতের জবাবে সুবিধা পাবেন না মর্মে জানান। এধরণের পত্র আরডিএ পাওয়ার পরও আরডিএ কর্তৃক ওই আইনের বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরডিএ‘র এক কর্মচারী জানান, ২০১৮ সালে তদকালীন দুদকের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান রাজশাহীর শাহমুখদুম থানায় একটি চার্জশীট দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে তিন আসামী সুপ্রিমকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। ওই পিটিশনে তার ৪ সপ্তাহের স্টে অর্ডার প্রাপ্ত হন। তবে অত:পর আর সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান আর কোনো স্টে অর্ডার পাননি। পরবর্তীতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আপিল করেন যার শুনানি আজ অব্দি হয়নি।
তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী চার্জশীটভূক্ত আসামীর বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের বিধান থাকলেও তা চেয়ারম্যান কর্তৃক উপেক্ষিত হয়। বিবাদীর আপিলকে পুঁজি করে বর্তমান চেয়ারম্যান, আইন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ অভিযুক্ত আসামীর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, তবে মাস দুয়েক আগেই আরডিএ‘র আইন বিষয়ক কর্মকর্তা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিল- ‘তার বিরুদ্ধে (শেখ কামরুজ্জামান) প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’
২০০৭ সাল থেকে আরডিএ এর আইন বিষয়ক কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বর্তমান এস্টেট অফিসার মো. বদরুজ্জামান। গতকাল সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত আইন বিষয়ক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেও এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি আগে যা জানতাম তাও সব ভুলে গিয়েছি। আমাকে এসব বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবেন না প্লিজ। আমি ওপেন হার্ট সার্জারি করা হার্টের পেসেন্ট। আমি এসব ঝামেলায় নেই।’
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেন। গত রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) তার দপ্তরে গিয়ে অবৈধ নিয়োগ ও শেখ কারুজ্জামানের বিরুদ্ধে দূর্নীতির প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে জানানো হয়। জানতে চাওয়া হয় তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ কেনো নিচ্ছেন না?
তদপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না। আপনাদের এবিষয়ে জানা থাকলে আমাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। তবে কারো বিষয়ে চার্জশীট হলেই যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে হবে এমন কোনো আইন নেই।’
আরডিএ এর সহ: প্রকৌশলী শেখ কারুজ্জামানের দপ্তরে দুই দিন স্বশরীরে গিয়ে এবং বারং বার মুঠোফোনে কল দিলেও তার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আরডিএ এর একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, সাংবাদিক আসার কথা শুনেই তিনি আরডিএ তে গা ডাকা দিয়েছেন এবং তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে রেখেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.