স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার স্থান

 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পরেও সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার স্থান লালমনিরহাট রেলওয়ে রিকশা স্ট্যান্ড। ওই রিকশা স্ট্যান্ডে নিরীহ ৪ শতাধিক বাঙালিকে দাঁড় করিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৪ ও ৫ এপ্রিল লালমনিরহাট শহরের রেলওয়ে স্টেশনের রিকশা স্ট্যান্ডে রংপুর থেকে আসা ট্রেনযাত্রী, রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারিসহ প্রায় ৪ শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। সেদিন গুলিবিদ্ধ মানুষগুলো মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। তখন তাদের দ্রুত মৃত্যু নিশ্চিত করতে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে পৈশাচিক কায়দা হত্যা করা হয়। পরে মরদেহগুলো ভ্যানে করে নিয়ে রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসের পেছনে একটি গর্তে ফেলে দেয়। যেখানে গড়ে উঠেছে একটি গণকবর।
সেদিন রেলওয়ে সাহেব পাড়া কলোনি, রেলওয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক, রোগী, স্বজন, নার্স, আয়া ও হাসপাতালের কর্মচারীদের যাকে যেখানে পেয়েছে নির্বিচারের হত্যা করেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। নারী, কিশোরী, যুবতী ও কন্যা শিশুদের পাশবিক যৌন নির্যাতন করার পর নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, শহীদদের অনেক পরিবারবর্গ এখনো বেঁচে আছেন। রেলওয়ে রিকশা স্ট্যান্ডের গণহত্যার স্থানটিতে শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
জেলা শহরের প্রবীণ রং মিস্ত্রি আব্দুর রশিদ জানান, সেই ভয়াল দিনের কথা মনে পড়লে এখনো শরীর শিহরে উঠে। ভয়ানক ওই দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছি। জীবন মৃত্যুর মাঝখানে ছিলাম। সবাইকে যখন গুলি করে তখন আমি মাটিতে লুটে পড়ি। আমার পায়ে গুলি লাগে। মৃত ভেবে তারা অন্য লাশের সাথে আমাকেও গর্তে ফেলে দেয়। পরে পাক হানাদার বাহিনী চলে গেলে পায়ে গুলি লাগা রক্তাক্ত অবস্থায় হামাগুড়ি দিতে দিতে বাড়িতে চলে আসি। পরে গোপনে রংপুর হাসপাতালে গিয়ে গুলি বের করি।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার আবু বকর সিদ্দিক জানান, সেদিনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের নির্মম সাক্ষী রেলওয়ে গণকবর। তৎকালীন এখানে ছিল গর্ত। সেখানে লাশগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। পরে লাশগুলো স্থানীয়রা সেখানেই মাটি চাপা দেয়। সেদিনের সেই বর্বর গণহত্যার স্থান লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রিকশা স্ট্যান্ড। স্বাধীনতার এতদিন পরেও ওই স্থানটি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করা হয়নি। এখানে শহীদ স্মৃতি স্মরণে আলাদাভাবে মিনার নির্মাণের দাবি জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.