সিলেটে ভাঙা হচ্ছে মুঘল স্থাপত্যের দেওয়ানের ব্রিজ, জনমনে ক্ষোভ

সিলেট ব্যুরো: সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নে মোঘল স্থাপত্যের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেওয়ানের ব্রিজ। রাস্তা সংস্কারের নামে ভেঙে ফেলা হচ্ছে সেই ব্রিজটি। ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। রাস্তা প্রশস্ত করার করতে ঐতিহ্যের স্মারক এ ব্রিজটি ভেঙে না ফেলে সংরক্ষণের দাবি জানায় এলাকার সচেতন জনগণ।
আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেছেন, এটা ঐতিহাসিক হ্যারিটেজের অংশ। এটা সংস্কার বা মেরামত করা উচিত ছিলো। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোনের (বাপা) নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল করিম কিম বলেন, সিলেটে এমনিতেই মোগাল স্থাপত্যের নিদর্শন কম। তিনি অবিলম্বে ভাঙা অংশ সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
রেকর্ড অনুযায়ী, মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহের রাজত্বকালে অল্প কিছুদিনের জন্য সিলেটের দেওয়ান (রাজস্ব কর্মকর্তা) নিযুক্ত হয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে সিলেট আসেন দেওয়ান গোলাব রাম (মতান্তরে গোলাব রায়)। এ সময় সিলেট অঞ্চলের ফৌজদার ছিলেন সমসের খান এবং সারা বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন সুজা উদ্দিন খান। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই গোলাম রাম গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমি সম্পর্কে অবগত হন। পরে তার নির্দেশে তৎকালীন সময়ে সিলেট থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ পর্যন্ত সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়। এ সড়কপথে ঢাকাদক্ষিণ এসে দেওয়ান শ্রী চৈতন্যের পিতৃভূমিতে এক মন্দির স্থাপন করেন তিনি। এটার সম্মুখে একটি দীঘিও খনন করান। হেতিমগঞ্জ থেকে ঢাকাদক্ষিণগামী সড়কটি আজও দেওয়ানের সড়ক নামে পরিচিত। এ সড়কে দেওয়ানের পুলটি গোলাপগঞ্জবাসীর নিকট মুঘল স্থাপত্য রীতির একটি নিদর্শন ছিলো। প্রাচীন দলিল ও রেকর্ডপত্রে তারই সাক্ষ্য বহন করে।
প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ঢাকাদক্ষিণ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান নজমুল ইসলাম বলেন, ঐতিহাসিক এই নিদর্শনটাকে না ভেঙে যদি সংস্কার করা হতো, তাহলে তা মঙ্গলজনক হতো। কেন না মোঘল স্থাপত্যের নিদর্শন এখন পাওয়া খুবই দুষ্কর। নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে ঐতিহাসিক নিদর্শনটি এখন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দেওয়ানের পুলটি খুবই পুরাতন। এ ধরনের পুল দেশের আর কোথাও নেই। তবে সড়কের উন্নয়নের জন্য দেওয়ানের পুলটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সড়কটি দুই আড়াই বছরের মধ্যে সিলেট-জকিগঞ্জের বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাস্তা প্রশস্তকরণসহ অন্যান্য কাজ চলবে। দেওয়ানের পুলটি উচু এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অল্প অল্প করে ভেঙে পড়ছে। স্থানীয়দের দাবি ছিলো দেওয়ানের পুলটি জায়গায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় কি না। কিন্তু কারিগরি কমিটি ব্রিজটি বেশ পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, এটা রাখলেও টিকবে না। জায়গায় রেখে বিকল্প চিন্তা করলেও দেখতে বেমানান লাগে। যার জন্য পুলটি ভেঙে ফেলতে হচ্ছে।

 

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সিলেট ব্যুরো প্রধান মো. জাকিরুল হোসেন জাকির। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.