নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি নীতিমালা অমান্য করে নিয়মবহির্ভূতভাবে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া বালু কারবারের আড়ালে একই স্থানে নিয়মিতভাবে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনও চলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী- পদ্মা নদীর তীর থেকে এক হাজার পাঁচশ’ মিটার থেকে দুই হাজার মিটার দূরত্বে বালু উত্তোলন করার কথা। কিন্তু লীজ গ্রহীতারা (ইজারাদার) এই নিয়মের কোনো তোয়াক্কা না করে ফুলতলা (সেখেরপাড়া-অবদা) এবং প্রেমতলী বালু ঘাট সংলগ্ন নদীর তীর থেকে প্রায় পাঁচশ’ মিটার দূরত্বে বালু উত্তোলন করছেন।
নদীর গতিপথ তথা পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আর তার পাশ থেকেই বালু উত্তোলন করে সেই রাস্তা দিয়ে ট্রাকে করে বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দারা লীজ গ্রহীতাদের ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না।
এদিকে, সরকারি নীতিমালা অমান্য করে বালু উত্তোলন এবং বালু কারবারের আড়ালে একই স্থানে নিয়মিতভাবে মাদক কারবারীরা মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন করে আসছেন- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে যান বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকের আটজন সাংবাদিক।
এসময় ইজারাদারের ইন্ধনে কনক, শরিফুল ইসলাম ডিকেন, সেলিম ও শিমুলের নেতৃত্বে অন্তত ৩০-৩৫ জন সন্ত্রাসী সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং মারমুখি আচরণ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা একজন ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরা কৌশলে হাতে নিয়ে ছবি মুছে দেন। এছাড়া সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন, সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে বালুঘাট ইজারা নিয়েছি। এ ব্যাপারে কোনো নেগেটিভ নিউজ করলে প্রাণে মেরে ফেলব বলে হুমকি দেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় গতকাল রোববার দিবাগত রাতেই সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গোদাগাড়ী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে। গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি মো: খলিলুর রহমান পাটোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গোদাগাড়ীর এই দুটি বালুমহালের ইজারা নিয়েছেন দুইজন ইজারাদার। তারা হলেন- রাজশাহীর পবার হরিপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলম ও হড়গ্রাম এলাকার মনোয়ারুল হোসেন। এরমধ্যে জাহাঙ্গীর আলম ফুলতলা (সেখেরপাড়া-অবদা) বালুঘাট এবং মনোয়ারুল হোসেন প্রেমতলী বালুঘাট ইজারা নিয়েছেন। নেপথ্যে এদের সহযোগিতায় রয়েছেন সরকার সমর্থক রাজশাহীর একজন নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বালুঘাট সংলগ্ন নদী তীরবর্তী সড়ক থেকে অন্তত চারশ’ থেকে পাঁচশ’ মিটার দূরত্বে একটি বাথান (শোয়া-বসার স্থান) রয়েছে। এই জায়গাটি বালু মহালের লোকজন তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। কিন্তু এর পাশাপাশি সেখানে মাদক কারবারীরা ও এক শ্রেণির লোক নিয়মিতভাবে মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবন করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বহু আগে থেকেই সীমান্তবর্তী এই উপজেলার ফুলতলা (সেখেরপাড়া-অবদা) এবং প্রেমতলী বালু ঘাট সংলগ্ন এলাকাসহ অধিকাংশ এলাকা মাদকপ্রবণ হিসেবে পরিচিত। মাদক কারবারীরা এই দুটি বালু ঘাটও ব্যবহার করছে মাদকের নিরাপদ রুট হিসেবে। ফেনসিডিল, ইয়াবা, হোরোইন, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকের কারবার চলে এই এলাকা ঘিরে। এটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট ও তরুণ-যুব সমাজের বিপথগামী হওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ বিটিসি নিউজকে জানান, গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা (সেখেরপাড়া-অবদা) এবং প্রেমতলী বালু ঘাট থেকে নদীর মূল ধারা অনেক দূরে সরে গেছে। তবে নদী তীরবর্তী ঘাট সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে অন্তত চারশ’ থেকে পাঁচশ’ মিটার দূরত্বে যেটুকু পানি আছে, তাতেই গোসল ও কাপড় ধোয়ার কাজ করেন তারা। এই রাস্তা দিয়ে বালু তোলার কারণে এখানে তাদের গোসল করতে অসুবিধা হয়। এখানে লোক সমাগম হয়। সবসময় বালুবাহী ট্রাক যাতায়াত করার কারণে ধুলাবালি উড়তে থাকে। বালু পরিবহনকালে ট্রাকের ওপর ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেয়ার নিয়ম।
কিন্তু বালুবাহী অনেক ট্রাকই ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয় না। এতে করে বাতাসে বালু উড়ে গিয়ে পথচারীসহ আশপাশের লোকজনের চোখেমুখে গিয়ে পড়ছে। বালুবাহী ট্রাকের কারণে নদী তীরবর্তী রাস্তাঘাটের স্থায়িত্বও নষ্ট হচ্ছে। এসব ব্যাপারে স্থানীয়রা ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না।
সরেজমিনে দেখা দেখা গেছে, সরকারি নীতিমালা অমান্য করে গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলতলা (সেখেরপাড়া-অবদা) এবং প্রেমতলী বালু ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ঠিকাদারের লোকজন। নদীর গতিপথ তথা পানি প্রবাহ বন্ধ করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। আর তার পাশ থেকেই বালু উত্তোলন করে সেই রাস্তা দিয়ে ট্রাকে করে বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানতে চাইলে ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিটিসি নিউজকে বলেন, এখানে অনিয়মের কিছু নেই। নিয়মমাফিকই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসা: নাজমুন নাহার বিটিসি নিউজকে জানান, পদ্মা নদীর তীর থেকে এক হাজার পাঁচশ’ মিটার থেকে দুই হাজার মিটার দূরত্বে বালু উত্তোলন করতে হবে। এই নিয়ম এখনও বলবৎ রয়েছে। এর অন্যথা হলে সেটা অবৈধ ও বেআইনি হবে। তিনি ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, নদীর তীর থেকে এক হাজার পাঁচশ’ মিটার থেকে দুই হাজার মিটার দূরত্বে বালু উত্তোলন করার সরকারি নীতিমালা রয়েছে। এই নিয়ম না মানলে সেটি বেআইনি হবে। এসময় ছুটিতে আছেন উল্লেখ করে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবু আসলামের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, আমি আপাতত রুটিন ওয়ার্ক করছি। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) সাথেই কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
সংবাদপ্রেরকবিটিসিনিউজএরনিজস্ব প্রতিনিধিমো: জাহিদুল ইসলাম (শিমুল) রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.