শীর্ষনেত্রীর ভোকাল টনিকের প্রতীক্ষায় তৃণমূলের সাংসদরা

কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: দিল্লি থেকে বিজেপি সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে বিরোধী নেতারা যতই গলা ফাটান না কেন, বিরোধী দলগুলির সার্বিক ঐক্যের পথে এখনও সবচেয়ে বড় কাঁটা পারস্পরিক বনিবনার অভাব। কোথাও আদর্শের প্রশ্নে, আবার কোথাও বা আঞ্চলিক সমীকরণের প্রশ্নে মতবিরোধ লেগেই আছে। সঙ্গে ‘ইগো’ ব্যাপারটা তো আছেই। আর ঠিক এই দুর্বলতাটাকে আড়াল করেই সংসদের বাদল অধিবেশনে বিরোধী শক্তিকে নেতৃত্ব দিতে এবারে কোমর বেঁধে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বাংলার সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ধরাশায়ী করে তৃণমূল নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই দলের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং আস্থা বেড়েছে বিরোধী শিবিরে। শক্তির বিচারে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় তাঁরা যে জায়গাতেই থাকুন না কেন, উৎসাহে এখন টগবগ করে ফুটছেন দলের সাংসদরা।
আগামী সোমবারই শুরু হচ্ছে সংসদের অধিবেশন। একে সামনে রেখেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ বিজেপি বিরোধীতার সলতে পাকাতে শুরু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। অধিকাংশ বিরোধী নেতার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই সংসদে গেরুয়া শিবিরকে জোর ধাক্কা দিতে চাইছে ঘাসফুল শিবির।
এদিকে বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ শারদ পাওয়ার শনিবার দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। দিল্লিতে তাঁদের মধ্যে একান্তে কথাবার্তা হয়েছে প্রায় ৫৭ মিনিট। সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক মুখে সুপার হেভিওয়েট নেতার এই বৈঠক ব্যাপক কৌতুহল জাগিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন উঠেছে, এই বৈঠক কি কোনও নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত?
এবারের সংসদ অধিবেশনে তৃণমূল ঝড় তুলতে চায় মূলত মহিলা সংরক্ষণ বিল ইস্যুতে। এই বিলের মূল উদ্দেশ্য লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ। ১৯৯৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকার বিলটি সংসদে পেশ করে। পরে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রের এন ডি এ সরকারও এই বিলের পক্ষে সওয়াল করে। কিন্তু বিলটি পাশ করানো সম্ভব হয়নি। ২০০৮এ কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-১ সরকার আবার এই বিল সংসদের অনুমোদনের জন্য পেশ করে। ২০১০ সালে তা রাজ্যসভায় গৃহীত হলেও, লোকসভাতে ঝুলেই থাকে। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের বক্তব্য, এটাই উপযুক্ত সময়। সংখ্যাধিক্যের জোরে এই অধিবেশনেই পাশ করিয়ে নেওয়া হোক দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মহিলা বিল। মূলত এই দাবিতেই এবারে সংসদের উভয় কক্ষে সরব হতে দেখা যাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে।
লক্ষ্যণীয়, কৃষি বিলকে কেন্দ্র করে সংসদে প্রথম হইচই বাঁধিয়েছিল কিন্তু তৃণমূলই। এবারে সেই কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিরোধীদের নেতৃত্ব দিতে চায় তারা। মুশকিলটা হচ্ছে, পাঞ্জাবে আকালি দলের মূল শত্রু কিন্তু কংগ্রেস। তাই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই সংসদে দু’দলে জোটবন্ধন কার্যত অসম্ভব। তাই লোকসভা এবং রাজ্যসভায় স্বল্প  সদস্যের শিরোমণি আকালি দলের দিকে এ ব্যাপারে সমর্থনের হাত  বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলই। একইভাবে উত্তর প্রদেশের কংগ্রেস বিরোধী সমাজবাদী পার্টি এবং দিল্লির আম আদমি পার্টিকেও সঙ্গ দিচ্ছে মমতার দল। ফ্লোর কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে কংগ্রেস সহ সব বিরোধী দলকে একসূত্রে বাঁধার উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।
শুধুমাত্র কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে নয়, পেট্রল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদেও ঝড় উঠবে সংসদে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও ব্রায়েন, সুখেন্দু শেখর রায়ের মতো তৃণমূলের লড়াকু নেতৃত্ব তো আছেনই, ২১ জুলাই রাতেই দিল্লি পৌঁছে যাওয়ার কথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এর কয়েকদিনের মধ্যেই রাজধানীতে পা রাখবেন সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং।
শীর্ষনেত্রীর ভোকাল টনিক দলের সাংসদদের মধ্যে কতটা লড়াকু মেজাজ জাগিয়ে তুলতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.