সরিষা চাষে সফল দিঘলয়ার এক কৃষক আরিফ মোল্লা

দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: নানা রকমের ফসল উৎপাদনের জেলা খুলনা। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া সবধরনের ফসল, ফুল ও ফল উৎপাদনের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এ জেলার কোন কোন জমিতে বছরে তিনটি আবার কোন কোন জমিতে ২টি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। আর এ কারণেই এ জেলার ফল ও ফলজ উৎপাদনকারী চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে থাকে।
এ জেলার চাষিরা বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করে সারা দেশের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আদর্শ কৃষক আরিফ মোল্লা।
খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার ভৈরব নদীর কূল ঘেসে ফরমাইশখানা গ্রামের অবস্থান। আর এ গ্রামের আরিফ মোল্লা চলতি রবি মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৮ এর চাষ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন পুরো দিঘলিয়া উপজেলা জুড়ে। সরকারের সিদ্ধান্ত দেশের তেলের ঘাটতি পূরণে উচ্চ ফলনশীল বারি সরিষা-১৮ বীজ উৎপাদন করে স্থানীয় চাষিদের মাঝে ছড়িয়ে সাড়া জাগিয়েছেন তিনি। আশে-পাশের চাষিরাও উচ্চফলনশীল এ জাতের এ বীজ ও সার পেয়ে খুশি।
কৃষক আরিফ বলেন, রাকিব মোল্লা একজন নতুন কৃষক ২ বিঘা নিজস্ব জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফসল ফলিয়ে অনেক লাভবান হচ্ছেন। আমরা নিয়মিত আধুনিক চাষাবাদ নিয়ে মত বিনিময় করে থাকি। আমরা পরস্পরের পরামর্শ নিয়ে চাষাবাদ করে থাকি। রাকিব মোল্লার পাশা-পাশি আমরাও অধুনিক চাষাবাদে স্বাবলম্বী হচ্ছি।
কৃষক আরিফ মোল্লা বলেন, কৃষি কাজ বাপ-দাদার পেশা। দরিদ্র কৃষক পরিবারেই জন্ম আমার। লেখা-পড়া করার ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ পাইনি। আর সে কারণেই, বলতে গেলে জন্মের পর থেকেই কৃষি কাজ করি। আমি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এস এম ই চাষি। বর্তমানে অন্যের জমি লিজ নিয়ে সাড়ে ৫ বিঘা জমি চাষাবাদ করি।
গত তিন বছর ধরে অন্যান্য ফসলের সাথে উন্নত জাতের কোলেস্টেরল বা ফ্যাটি এসিড (ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬) মানবদেহের জন্য উপকারী, সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যা অন্য সরিষার তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি ফলন হওয়ায় বারি সরিষা-১৮ এর চাষ করছি। এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বারি সরিষা-১৮ চাষ করেছি। দুই বার সার ও দুই বার সেচ দিতে হয়েছে। সেচ, সার, বীজ ও লেবার খরচসহ সব মিলিয়ে ২ বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর ২ বিঘা জমি থেকে আমি ১০ মণ সরিষা পাবো। আশা করছি প্রতিমণ সরিষা ৩ হাজার ৩শ টাকা করে বিক্রয় করতে পারবো। 
তিনি জানান, বারি সরিষা-১৮ ছাড়াও আমি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে নানা ধরণের সবজি চাষ করেছি। বেগুন, সিম, লাল শাক ও পালং শাকসহ নানা সবজির ফলনও ভালো হয়েছে। আমাকে সরিষা চাষে সহযোগিতা করেছে দিঘলিয়া উপজেলার কৃষি দপ্তর।
অল্প খরচে অধিক লাভ। রোগবালাই তেমন হয় না। ফলনো ভাল হয়েছে বাজারে চাহিদাও প্রচুর থাকায় এ অঞ্চলে বারি সরিষা-১৮ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বারি সরিষা-১৮, বারি সরিষা-১৪ সহ প্রায় সাড়ে ৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি দপ্তরের কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুস সামাদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আরিফ মোল্লা একজন সফল চাষি। কৃষি কাজ করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলের বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলার চাষিদের চাহিদা পূরণ করবে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে আলম বেপারী বারি সরিষা-১৮ চাষ করেছেন। আমরা তার মাঠ ঘুরে দেখেছি সরিষার ফলনও হয়েছে ভালো। আশা করছি তিনি অধিক লাভবান হবেন। তার পাশাপাশি দেশও এগিয়ে যাবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.