লিবিয়ায় অপহরণ : চার বাংলাদেশির পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: জীবিকার সন্ধানে লিবিয়ায় গিয়ে অপহরণের কবলে পড়া লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৪ বাংলাদেশির পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের বাড়িতে এখন আর ঈদের আনন্দ নেই। উল্টো বিকাশে মুক্তিপণের টাকা না দিলে ভুক্তভোগীদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অপহরণের শিকার শ্রমিকরা হলেন- লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে আল আমিন (২৩), জয়নাল আবেদিনের জামাতা ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙার ইদ্রিস আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৪০), রাজারহাটের ভীম শর্মা গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে আল আমিন (২২) এবং তার খালাতো ভাই ও পঞ্চগ্রামের রামরাম গ্রামের শাহিনুর ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৪)। তারা লিবিয়ার বেনগাজিতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
সরেজমিনে লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জয়নাল আবেদিনের (৬০) ভাঙাচোরা দো’চালা টিনের ঘর। তিন বছর আগে জমি বিক্রির ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছেন। তার সঙ্গে পাঠিয়েছেন মেয়ের জামাই হাফিজুল ইসলামকেও।
এসব বিষয়ে জয়নাল আবেদিন বলেন, গত ১১ মার্চ সকালে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তার ইমো নম্বরে ফোন করেন। এ সময় জানানো হয় তার ছেলে আল আমিন ও জামাতা হাফিজুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা, না দিলে আমার ছেলে আর মেয়ের জামাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা এখনো জোগাড় করা হয়নি। তারা চাপ অব্যাহত রেখেছে।
জয়নুল আবেদিনের মেয়ে জয়নব বলেন, ভাই আল আমিনের সঙ্গে স্বামীও লিবিয়ায় গিয়েছেন। এখন তারা অপহরণের শিকার হয়েছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের ছেলেকে লিবিয়া থেকে ফেরত এনে বাড়ি যেতে বলেছে। আমার দুই মেয়ে। সংসারটা বোধহয় নষ্ট হয়ে গেলো।
তাদেরই মতো আরেকটি পরিবার রয়েছে। এ পরিবার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ভীম শর্মা গ্রামের। এই গ্রামের আল আমিন লিবিয়ায় গেছেন দুই বছর আগে। তার বড় ভাই লিটন মিয়া জানান, গত ১১ মার্চ সকালে একটি নম্বর থেকে জানানো হয়, আমার ভাই আল আমিন, খালাতো ভাই রাকিবুল, সিন্দুরিয়া গ্রামের আরেক আল আমিন, তার ভগ্নিপতি হাফিজুলকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের মুক্তির জন্য জনপ্রতি পাঁচ লাখ করে টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে তাদের গুম করে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
লিটন অভিযোগ করে বলেন, এসবের পেছনে জড়িতরা হলেন পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের আবদুল মোন্নাফের ছেলে মিজানুর রহমান, একই ইউনিয়নের রামরাম গ্রামের সামসুল হকের ছেলে মো. নাজমুল হুদা (২৩) এবং একই গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে মো. সুলতান (৩২)। তারা লিবিয়ায় থাকেন।
লালমনিরহাট পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে অভিযুক্ত আবদুল মোন্নাফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা এসব মিথ্যা কথা বলছেন। এক প্রশ্নের জবাবে জানান, তিনিও শুনেছেন, গ্রামের কয়েকজন লিবিয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছেন।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার এসআই মো. রুহুল আমিন জামান, লিবিয়ায় মুক্তিপণের জন্য শ্রমিকদের অপহরণের বিষয়ে দুটি পৃথক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.