লালমনিরহাটে ১৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: মরার উপর খরার ঘা। আজ সোমবার বিকেল ৫ টায়  তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ও ধরলা নদীর পানি পুনরায় বিপদ সীমার ৬ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । ২৪ ঘন্টার ব্যাবধানে দ্বিতীয় দফায় নদী কূলবর্তী গ্রাম ও চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে।
এতে করে তিস্তা – ধরলা পাড়ে ১৫ হাজার পানি বন্দি পরিবার পড়েছে মহাবিপাকে। দেখা দিয়েছে নদীর পানির তীব্র স্রোত ও নদী ভাঙ্গন। বানভাসিদের আপদকালে সরকারি সহায়তা ১১ লাখ টাকা ও দেড়শত মেঃটন ত্রাণের চাল বরাদ্দ করেছে জেলা প্রশাসন । গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে হাতীবান্ধার ডাউয়াবাড়ি আলহাজ আছের মামুদ সরকার গণ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সকাল হতে তিস্তা নদী আবার রুদ্রমুর্তি ধারন করছে। উজানের ভারত অংশে গজলডোবায় আজ ২০ জুন সোমবার লাল সংকেত জারী করেছে। ভারতীয় সময় সকাল ৬টায় দো- মহনী পয়েন্টে ৮৫.৯৫ বিপদসীমা অতিক্রম করে ৮৫.৯৮ মিটার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ধেয়ে আসছে তিস্তার পানি। এই পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে।
সোমবার দুপুর ১২ টায় তিস্তা অববাহিকায় দোয়ানি পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৮ সেঃ মিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর ভাটিতে থাকা নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরে বসবাসরত মানুষজনকে নিরাপদস্থানে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে পানি বোর্ডের দোয়ানি পয়েন্টের বন্য সর্তকীকরণ কেন্দ্র হতে জানানো হয়। আজ সোমবার সকাল ৬টায় বাংলাদেশ অংশে ডালিয়ায় তিস্তা বিপদসীমার (৫২.৬০) ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ও সকাল ৯টায় হঠাৎ পানি হ্রাস পেয়ে ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিল কিন্তু দুপুর ১২টা মধ্যে হঠাৎ করে বিপদসীমার ২৮ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি হু হু করে লোকালয়ে ডুকছে।
মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে লোকজন ও গবাদি পশু, হাঁস মুরগী নিরাপদে সরিয়ে নিতে বলা হচ্ছে। সপ্তাহ ব্যাপী ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, রাতেই নদীসহ সকল নদ- নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মহা বিপাকে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। ভাটিতেও পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিক প্রবাহে নদ – নদীর পানি নেমে যেতে পারছে না।
জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫ টি উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। একটি স্কুল সম্পূর্ণ তিস্তা নদী গর্ভে বিহীন হয়ে গেছে। নদী পাড়ের গোবর্দ্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন মাদ্রাসা, বিলুপ্ত ছিটমহল কুলাঘাট ইউনিয়নে বোয়ালমারী বাঁশপচাই আদর্শ একাডেমী স্কুলে বন্যার পানি ডুকে গলা পানি হয়ে আছে। স্কুল মাঠে চলছে ভুরা । কেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
ডাউায়া বাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোঃ মশিউর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, সোমবার সকাল ১০ টার পর হতে উজান হতে ধেয়ে আসেছে তিস্তার পানি। তিস্তা পাড়ের গ্রাম গুলিতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রাস্তা ঘাট সবকিছু পানির নিচে। পানি বাড়ায় চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গেছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে তিস্তার পানি ২৮ সেঃমিঃ ও ধরলার পানি ৬ সেঃমিঃ বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলা পাড়ের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশন নাজিয়া নওরিন বিটিসি নিউজকে জানান, জেলার হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলা ১৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। এসব পরিবার কে সহায়তা করতে ১৫০.৫০ মেঃটন জিআর চাল, শিশু খাদ্য ক্রয় করতে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, গো খাদ্য কিনতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও জিআর নগদ অর্থ এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত নদীর পাড়ের মানুষরা।
চারিদিকে পানি আর পানি। রান্না করার এতটুকু জায়গাও নেই কোথাও। ঘর-বাড়ীতে পানি উঠেছে। এসব বানভাসি মানুষের নাড়ী পোতা জায়গা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে, মানুষের বাড়ীতে অথবা নৌকায় কিংবা কোন আশ্রয় কেন্দ্রে। বৃষ্টির মাঝে শুধু এক টুকরো পলিথিন টাঙ্গিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে অনেকে। কি অর্বননীয় দুর্ভোগ ঐ সব মানুষদের, না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। তাদের এ মুহূর্তে শুকনো খাবার খুব দরকার। সরকার সাধ্যমত চেষ্টা করছে বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য। কিন্তু তাহা প্রয়োজনের চেয়ে অপতুল। সমাজের বৃত্তবান মানুষ কে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলা প্রশাসক আহবান জানিয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.