লবনের দাম বৃদ্ধি’র গুজবে লবন কেনার হিড়িক খুলনায়

খুলনা ব্যুরো: লবনের দাম বৃদ্ধি’র গুজবে খুলনায় লন্কাকান্ড ৷ হঠাৎ বেড়ে গেছে লবণের দাম।  সমগ্র জেলা জুড়ে লবণ কেনা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। দাম বাড়ানো নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে ঘটেছে বাক বিতান্ড হাতাহাতি। গুজব ঠেকাতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে লবণ ক্রয়ের জন্য ক্রেতাদের ভিড়লক্ষ্য করা গেছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় ডিলার ও অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীর গোডাউন লবণ শূন্য হয়ে গেছে।
মহানগরীর বড় বাজার থেকে ফ্রেস লবণের কেজি কিনা হয়েছে ৩২ টাকায়। সেই লবণ সন্ধ্যায় ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মহানগরীর পাড়া মহল্লার দোকানগুলোতে সেই লবণ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ধকল কাটতে না কাটতেই বিভিন্ন স্থানে চলছে লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা। আবার কোন কোন অসাধু ব্যবসায়ী লবণের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে এ আশঙ্কায় লবণ মজুদ করে রেখেছেন।
সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সাজু বিটিসি নিউজকে বলেন, নবপল্লী স্কুলের সামনের বাবুল স্টোরের মালিক নুরুল ইসলাম সন্ধ্যায় আমার কাছে প্রতি কেজি লবণের দাম চেয়েছেন ২০০ টাকা। আমি শুনে অবাক হয়ে গেছি। লবণ না কিনে ফিরে এসেছি।
মুসলমান পাড়ার বাসিন্দা আলিপাক বাজ জুয়েল বলেন, পেঁয়াজের মতো দাম বেড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় ৫ কেজি লবণ কিনেছি।
মেসার্স মুরাদ ট্রেডিং এর পাইকারী বিক্রেতা জিয়াউল হক মিলন বিটিসি নিউজকে বলেন, লবণের দাম বাড়ার গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল। আর এ গুজব ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে শুরু করে গ্রামে-গঞ্জে। লবণের দাম বাড়ার খবর পেয়ে সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে দোকানে দোকানে লবণ কিনতে ভীড় করছেন। আমাদের দোকানের লবণ সব বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা আগের নির্ধারিত মূল্যে লবণ বিক্রি করেছি।
এদিকে লবণ নিয়ে গুজব ছড়ানোর পর খবর পেয়ে প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাঠে নেমেছে। হঠাৎ করে এভাবে লবণ ক্রয়ের কারণে অনেক ডিলার বা পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
লবণ নিয়ে গুজবে কান না দিতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও মানুষের মাঝে উদ্বেগ কমছে না।
আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্যার ইকবাল রোডের আনন্দ স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের বাড়ি থেকে গৃহিনীরা লবণ কিনতে আসছেন। কিন্তু লবণ না থাকায় সবাই খালি হাতেই ফিরছেন।
দোকানের মালিক আনন্দ সাহা বিটিসি নিউজকে জানান, গতকাল সোমবারও প্রতি কেজি লবণ ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে মানুষ লবণ কিনতে শুরু করে। বিকালের মধ্যেই সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। ৪০ টাকা দরে লবণ বিক্রি করেছেন ।
নগরীর বানরগাতি বাজারে দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি মুদি দোকানের সামনেই ক্রেতাদের ভিড়। দোকানের লবণের মজুদ শেষ। কিন্তু ভোক্তারা এই তথ্য বিশ্বাস করছেন না।
বাজারের বিশ্বাস স্টোরের মালিক রহমান বিশ্বাস বিটিসি নিউজকে জানান, দুপুরের পর থেকে মানুষ ৪/৫ কেজি করে লবণ কিনে নিয়ে গেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই লবণ শেষ হয়ে গেছে। এখন মানুষকে লবণ দেব কোত্থেকে। সবাই ভুল বুঝে গালাগাল করছে।
নগরীর বড় বাজার ও সন্ধ্যা বাজারে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বিটিসি নিউজকে জানান, বুধবারে আমরা অভিযানে নামবো। অনিয়ম বা হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেলে জরিমানা করা হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, সন্ধ্যায় বাজার তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুজব প্রতিরোধে তিন জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহানগরীর বাজার তদারকির জন্য এই তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। অনুরূপভাবে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে বাজার তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত  লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি মাস থেকে লবণের উৎপাদন মওসুম শুরু হয়েছে। সে হিসাবে লবণের কোনো ঘাটতি নেই।
কাউকে গুজবে কান না দেওয়ার আহবান জানান জেলা প্রশাসক।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.