রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যত অভিযোগ

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে আদালত। রুশ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ যে তিনি বেআইনিভাবে ইউক্রেনের শিশুদের রাশিয়াতে সরিয়ে নিয়েছেন। আদালত বলছে, এই অপরাধ রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই ঘটে চলেছে।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস বলে থাকে যে “যুদ্ধেরও কিছু নিয়ম আছে।” আর এই নিয়মগুলো আরো বেশ কিছু আন্তর্জাতিক আইন ও নির্দেশনার সাথে মিলে জেনেভা কনভেনশন নামে পরিচিত।
যার মধ্যে রয়েছে, সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোককে জেনেশুনে আক্রমণ করতে পারবে না। একই সাথে এমন কোন ভবন আক্রমণ করবে না যা বেঁচে থাকার জন্য জরুরী। কিছু অস্ত্রও নিষিদ্ধ করা আছে যেমন অ্যান্টি পারসোনাল ল্যান্ড মাইন, রাসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্র।
অসুস্থ ও আহতদের অবশ্যই সেবা করতে হবে, আর আহত সৈন্যও যুদ্ধবন্দী হিসেবে শুশ্রূষা পাওয়ার অধিকার রাখে। হত্যা, ধর্ষণ বা গণ নির্যাতনের মতো মারাত্মক অপরাধকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বা ‘জেনোসাইড’ বলা হয়ে থাকে।

বুচা শহরে দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা। ছবি: এপি

ইউক্রেন অভিযোগ করে আসছিল গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া তাদের অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত হাজার দশেক যুদ্ধাপরাধ করেছে। তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল রাশিয়া জোর করে দখল করা অঞ্চল থেকে শিশুদের তাদের দেশে নিয়ে আটকে রাখছে।
ইউক্রেনে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন জানায়, তারা শত শত ইউক্রেনীয় শিশুদের অবৈধভাবে রাশিয়াতে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে।
রাশিয়া এমন কিছু নীতি গ্রহণ করেছে যেখানে শিশুদের জোর করে রাশিয়ার নাগরিকত্ব নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এরপর তাদের দত্তক দেয়ার মাধ্যমে যাতে তারা পাকাপাকিভাবে রাশিয়ায় থেকে যায় সেই ব্যবস্থা করছে, কমিশন তাদের রিপোর্টে এমনটাই বলেছে।
ইউক্রেন
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, এটা আসলে সাময়িক একটা ব্যবস্থা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বেশিরভাগই লম্বা সময়ের জন্য আটকা পড়ছে এবং বাবা-মা’র সাথে তাদের যোগাযোগ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
ইউক্রেন সরকার বলছে, এমন জোর করে নিয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা ১৬ হাজার ২২১ জন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কী বলছে?
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-আইসিসি এক বিবৃতিতে বলেছে, এটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে যে মি. পুতিন এই অপরাধ সরাসরি করেছেন। একইসাথে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি বন্ধ করার সুযোগ থাকলেও তিনি সেটা করেননি।
আইসিসির আইনজীবি কারিম খান বিবিসিকে বলেন, শিশুরা কখনোই যুদ্ধের মাধ্যমে দখল হতে পারে না, তারা দেশান্তরী হতে পারে না। এই ধরণের অপরাধ বুঝতে আইনজীবি হওয়ার দরকার পড়েনা। যে কোন মানবিক বোধ সম্পন্ন মানুষই বুঝবে যে কতোটা গুরুতর অপরাধ এটি।

ইউক্রেনের শিশু

আইসিসি জানায় তারা শুরুতে এই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু আর যাতে এরকম অপরাধ না ঘটে সেজন্য তারা এটি প্রকাশ করেছে বলে জানায়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ২০০২ সালে গঠিত হয়। এর গঠনতন্ত্রে বলা হয় প্রতিটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের নিজেদের দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধীদের বিচারকাজ পরিচালনা করা।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী

আইসিসি শুধু তখনই হস্তক্ষেপ করে যখন একটি রাষ্ট্র এমন অপরাধীর বিরুদ্ধে তদন্তে অস্বীকৃতি জানায় বা অসমর্থ হয়।
বিশ্বের ১২৩টি দেশ এটি মেনে চলার কথা বললেও রাশিয়া এর বাইরে থেকেছে। আবার ইউক্রেন চুক্তিতে সই করলেও আইসিসির অনুমোদন দেয়নি। (সূত্র: বিবিসি বাংলা) #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.