রামেবি ভিসি’র পিএস এর জাল সনদসহ নানান অভিযোগ থকার পরেও বহাল তবিয়তে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) ইসমাঈল হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং পদটির অপব্যবহার করে তিনি রামেবির আওতাধীন বিভিন্ন নার্সিং ও মেডিকেল কলেজ থেকে লাখ লাখ টাকা বাগিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও ইসমাঈল ভিসির কাছের মানুষ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না এবং এসব বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছে না বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের হাতে আসা তার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ সার্টিফিকেট যাচাই করে এমন তথ্য মিলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিপরীতে শিক্ষার্থীর নাম ঠিক থাকলেও জন্মতারিখ ও তার বাবার নামে মিল পাওয়া যায়নি। এমনকি সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন করেও জন্ম তারিখ ও বাবার নাম মিল পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় তদন্ত করে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি উঠেছে।
একটি সুত্রে জানা গেছে, ইসমাঈল হোসেন প্রথমে রামেবিতে পিও কাম কম্পিউটার অপারেটর (১০ম গ্রেড) হিসেবে নিয়োগ পান। চাকরির পরের বছরই তিনি লিয়াজোঁ ও প্রটোকল অফিসার (৯ম গ্রেড) হিসেবে আবেদন করেন। তৎকালীন ভিসির সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ এই পদে নিয়োগ পান।
ইসমাঈল হোসেনের দেওয়া তথ্যমতে, তিনি রাজশাহী থেকে ২০১১ সালে এসএসসি ও ২০১৩ সালে এইচএসসির পর ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্টামফোর্ড থেকে বিবিএ এবং সেই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগ থেকে ইভিনিং কোর্সে এমবিএ সম্পন্ন করেন। তবে ইসমাঈলের স্টামফোর্ডের সার্টিফিকেটের বিষয়টি অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য। তার নিজের ভোটার আইডিকার্ডসহ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রেজিস্ট্রেশন আইডিটি নম্বরের বিপরীতে সার্টিফিকেটটি জমা দিয়ে রামেবিতে নিয়োগ পেয়েছেন, সেই আইডির মূল শিক্ষার্থীর নাম মোঃ ইসমাইল হোসেন হলেও তার জন্মতারিখ ও বাবার নাম সম্পূর্ণ আলাদা।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিবিএ ০৪৮ ১৫০৪৫ রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষার্থী মোঃ ইসমাইল হোসেনের জন্মতারিখ ১৭ নভেম্বর ১৯৯৩ এবং তার বাবার নাম মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মিয়া।
অথচ রামেবির মোঃ ইসমাঈল হোসেনের ভোটার আইডি ও অন্য সনদ অনুসারে তার জন্মতারিখ ৩ অক্টোবর ১৯৯৫ এবং বাবার নাম শাহজাহান আলী।
সূত্র জানায়, লিয়াজোঁ ও প্রটোকল অফিসার ও উপাচার্যের পিএস ইসমাঈল হোসেনের জাল সার্টিফিকেটসহ তার নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সচিব ২০২১ সালে রামেবির উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ওই চিঠিতে ইসমাঈল হোসেন জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি করছেন বলে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাসিক কর্তৃপক্ষ।
রাসিক সচিবের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে রামেবির তৎকালীন রেজিস্ট্রার ড. মোঃ খালেদ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর ইসমাঈলের সার্টিফিকেট তদন্তের জন্য চিঠি পাঠান। যেখানে ইসমাঈলের নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার রেজিস্ট্রেশন আইডি এবং পরীক্ষার ফলাফল উল্লেখ করে যাচাই করতে বলা হয়। তবে সেই চিঠিতে ইসমাঈলের জন্মতারিখ, বাবার নাম ও ঠিকানার বিষয়ে কোনো কিছুই জানতে চাওয়া হয়নি।
রামেবির রেজিস্ট্রারের সেই চিঠি পাঠানোর ১৯ দিন পর স্টামফোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ইসমাঈল হোসেনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর, সিজিপিএ নম্বর উল্লেখসহ পাসের সার্টিফিকেটটি ঠিক আছে উল্লেখ করে চিঠি পাঠান।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামেবির একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, নামের সঙ্গে মিল রেখে প্রকৃত শিক্ষার্থীর আইডি ব্যবহার করে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে রামেবিতে দেওয়া হয়েছে এবং এই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে ইসমাঈল হোসেন কর্মরত আছেন।
রামেবির লিয়াজোঁ ও প্রটোকল অফিসার এবং ভিসির পিএস মোঃ ইসমাঈল হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এর আগেও একাধিকবার এ বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে কোনো অনিয়ম মেলেনি।’
রামেবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মোঃ আনোয়ারুল কবির এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে ভিসির দপ্তর থেকে জারি করা বিবৃতি দিয়ে বলেন, কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী রামেবি কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যতীত কোনো বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে দিতে পারবেন না। (পর্ব-০১)
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.