রাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের যৌণ হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জামিনে, ভয়ে স্কুল ছেড়েছে ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২৪ ডিসেম্বর ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক পরীক্ষার খাতা দেখানোর দিন। ৩০ ডিসেম্বর ছিল বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ। ১লা জানুয়ারি বই উৎসব। আর ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ক্লাস। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক দুরুল হুদা জামিনে কারামুক্ত হয়ে স্কুলে হাজিরা দিচ্ছেন।

এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে স্কুলে দেখে ভয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার ৬ষ্ঠ শ্রেণির (বর্তমানে ৭ম) ওই ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সে এখন বাসায় কান্নাকাটিসহ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এদিকে মেয়ের উদ্ভূত মানসিক অবস্থায় তার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক মা এবং নিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বাবাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানা যায়।

তারা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক কারামুক্ত হয়ে তাদেরকে (ছাত্রীর মা-বাবা) মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় পূর্বের মামলার বাদী থানায় পৃথক সাধারণ ডায়েরি (জিডি, নং-৭৬, তারিখ-২৩/১২/২০১৯) করেছেন।

জিডি সূত্রে জানা যায়, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক দুরুল হুদা ভাড়াটে লোকজন দিয়ে তাদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে তাদের মুঠোফোনে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হচ্ছে। পরিচয় জানতে চাইলে তারা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে লাইন কেটে দিচ্ছে। তিনি সপরিবারে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন এবং তার মেয়েরা ক্লাসে যেতে ভয় পাচ্ছে।’

অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রউপদেষ্টার কোমলমতি মেয়েটির শ্লীলতাহানির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত ও নিপীড়ক শিক্ষকের পক্ষ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটিকে ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে ছাত্রীর মা-বাবা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ‘দীর্ঘ দুইমাস কারাগারে থাকলেও আসামির বিরুদ্ধে চাকরিবিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তারা আপ-টু ডেট ঘটনা স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি (পরিচালক, রাবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় অবগত করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে গভর্নিং বডির সভাপতি এমনকি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন আসামিকে সাময়িক বরখাস্তের আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন করছেন।

আসামি জামিনে মুক্ত হলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়নি। ’পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে তাদের রাবি ক্যাম্পাসের বাসায় পড়াতেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক, আসামি দূরুল হুদা (৩৩)।

গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পড়ানো শেষে বাড়ি ঘুরে দেখানোর কথা বলে কৌশলে ছাত্রীকে স্টোর রুমে নিয়ে যান শিক্ষক দুরুল হুদা। সেখানে তিনি ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটান। ওই সময় ছাত্রী, শিক্ষককে ধাক্কা মেরে চলে যেতে চাইলেও তিনি আবারও ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানি করেন। এসময় মেয়ের চিৎকারে তার অধ্যাপক মা দৌড়ে ঘটনাস্থলে যান। তখন অভিযুক্ত শিক্ষক পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ২০ অক্টোবর ছাত্রীর মা নগরীর মতিহার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একটি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রীর মায়ের লিখিত অভিযোগ ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আাইনে’ রেকর্ড করে ওই রাতেই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর আসামি জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

জানতে চাইলে স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হাসান চৌধুরী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মৌখিক নিষেধ থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় নি। যেহেতু উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা, তাই তার সিদ্ধান্ত অমান্য করা যাচ্ছে না’ বলেও মতামত দেন অধ্যাপক চৌধুরী।

তবে রাবি উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উপাচার্যের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। উপাচার্য ভবনের ল্যান্ড ফোনে রিং হলেও কেউ রিসিভ করেননি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.