রাজশাহী লক্ষিপুরের ‘আতঙ্ক’ কে এই রিচার্ড?

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীর লক্ষিপুর, মেডিকেলের মোড় থেকে জিপিও মোড় এলাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি আর ছিনতাই যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। এসব এলাকায় রয়েছে একাধিক ক্লিনিক, ডায়গনষ্টিক সেন্টার ছাড়াও শতাধিক ডাক্তারে চেম্বার।
এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকায় বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগি ও তাদের স্বজনরা পড়ছেন ছিনতায়ের কবলে। সর্বস্ব হারিয়ে চিকিৎসা ছাড়ায় ফিরছেন বাড়িতে।
আর এসকল কর্মকান্ডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন লক্ষিপুর জিপিও এলাকার রিচার্ড (৪০) নামের এক কুখ্যাত ছিনতাইকারি। তার রয়েছে বেশকিছু গ্রুপ। তার ছিনতাই করার ধরণ একটু অন্যরকম। টাকা প্রয়োজন হলেই নেমে পড়ে রাস্তায়। বেশির ভাগ গ্রাম থেকে আসা মানুষদের টার্গেট করেন রিচার্ড। ছিনতায়ের কবরেল পড়া ভুক্তভোগীরা পুলিশি ঝামেলা মনে করে অনেকে থানায় অভিযোগ দেননা। আবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মিলেনা বলেও জানান, স্থানীয়রা।
তানোর উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আসমা বেগম (৩৫) নামের এক ভূক্তভোগী জানান, গত বুধবার ১০ নভেম্বর সন্ধার দিকে রামেক থেকে ছাড়পত্র নিয়ে লক্ষিপুরে ওষুধ কিনার জন্য যায়। সেখান থেকে ঘোড়া চত্বর হয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় ছিনতাইকারিদের কবলে পড়েন। এসময় তার কাছে থাকা নগদ তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে যায় তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা দুরুল হুদা (৪৫) নামের এক ব্যক্তি বিটিসি নিউজকে জানান, লক্ষিপুর পপুলার ডায়গনষ্টিক সেন্টারে ডাক্তার দেখিয়ে রাত ৮টার দিকে সিটি বাইপাস মোড়ে যাওয়ার পথে ছিনতায়ের শিকার হন তিনি। এসময় তার প্যান্টের পকেটে থাকা ৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে যায় ছিনতাইকারিরা।
আর এই ছিনতাই গ্রুপের অন্যতম ও প্রধান সদস্য হিসেবে রিচার্ড সকলের কাছে পরিচিত। রিচার্ড বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষিপুর ও জিপিও এলাকায় চিহিৃত চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে সুমন নামের এক ব্যক্তি।
রাজপাড়া থানার একটি সুত্র বলছে, রিচার্ডের নামে রয়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী-শিশু ও হত্যাসহ অন্তত্ ডজন খানেক মামলা।
গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর (থার্টিফাস্ট নাইট) উপলক্ষ্যে ডাঃ লতিফ সিরাজী নামের এক ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করে রিচার্ড। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে তার চেম্বারে রিচার্ড ও তার সহোযোগিরা জোড়পূর্বক প্রবেশ করে চেম্বার ভাংচুর করা সহ শারীরিকভাবে নির্যাতনও করে। এঘটনায় ভুক্তভোগী ডাঃ লতিফ সিরাজি রাজপাড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও লক্ষিপুর জিপিও এলাকার একটি আবাসিক হোটেলের মালিক মাইনুল নামের এক ব্যক্তির কাছে অভিযুক্ত রিচার্ড কয়েকদিন আগে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। মাইনুল তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাইনুলকে মারধর করে প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দেয় রিচার্ড।
চলতি বছরের প্রথমদিকে, রিচার্ড ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জিপিও এলাকার বসুন্ধরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে ও ভাংচুর করে। বিষয়টি রাজপাড়া থানা ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুজ্জামান টুকুকে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তরা অবগত করার পর থানাপুলিশ ও কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে আসা মাত্রই অভিযুক্ত রিচার্ড ও অন্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়। এবং পরবর্তীতে নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা চালায়। রিচার্ড বেশকয়েক বছর ধরেই জিপিও, টিবি পুকুর ও লক্ষিপুর এলাকায় নিয়মিত ভাবে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অপরাধ করে আসছে বলে জানাই স্থানীয়রা।
কয়েকদিন জেলে থাকার পর জামিনে বের হয়ে আবারো নিজেকে সেই পূর্বের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত করে রিচার্ড। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ লক্ষিপুর কাঁচাবাজার ও জিপিও এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ব্যবতীত রিচার্ডকে কাবু করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে লক্ষীপুর পুলিশ বক্সের ইচার্জ এসআই মানিক হোসেন জানা্ন, আমি নতুন জয়েন্ট করেছি। এছাড়া ভুক্তভোগীরা কেউ এসে অভিযোগ দেননা। দিলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে এটিএসআই নেছার উদ্দিন জানান, এর আগে একটি ছিনতায়ের ঘটনায় তার বাড়ি চারিদিক দিয়ে ঘেড়াও করা হলেও সে ছাদ দিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া তাকে একাধিকবার গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
রিচার্ডের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার সত্যতা স্বীকার করে রাজপাড়া থানার সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) সোহেল রানা বিটিসি নিউজকে বলেন, এর আগে একটি ছিনতায়ের ঘটনায় আমি নিজেই অভিযান চালিয়েছিলাম। কিন্তু ভুক্তভোগী মামলা না করায় পরে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে সমাধান করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনের জালে নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি।
কথা হয় রাসিকের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজামান টুকু সাথে, তিনি জানা্ন, আমি নিজেই অতিষ্ঠ হয়ে গেছি তার এমন কর্মকান্ডের অভিযোগ পেয়ে। রিচার্ডের সহযোগী সুমন তার বাড়ি চারঘাট উপজেলায়। তারা উভয় ছিনতাই চাঁদাবাজি করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে, এটা নতুন কিছুনা। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে রোগি নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে তারা। তিনি আরও বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করলেই পারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু কি কারণে নেয়নসা তা আমার জানা নেই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.