রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) প্রতি মাসে  আসছে ১৫০ জন আত্মহত্যাচেষ্টাকারী রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগে সারা বিশ্বে বৃদ্ধি পায় আত্মহত্যার ঘটনা।বাংলাদেশ তার ব্যাতিক্রম নয়।এখানেও অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার ঘটনা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন ঝুঁকে পরছে ছোট ছোট কারণে আত্মাহত্যার পথে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিষন্নতা মানষিক চিন্তা, প্রেমে ব্যথর্তা, চাকরিতে ব্যর্থতা এসকল কারণেই আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। গড়ে প্রতি মাসে আত্মাহত্যার চেষ্টায় ১৫০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে রামেক হাসপাতালে।

গত ১ জানুয়ারী থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫ জন করে সেবা নিতে এসেছে এ হাসপাতালে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, নানা বয়সের মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। নানা ধরনের ঘুমের ওষুধ পান করে, অথবা গোলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে এসব রোগী। তবে এসব রোগীদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার কাজ করে যাচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশা, পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হতাশা, সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে হতাশা, নিজের শারীরিক-মানসিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশায় অনেকে বিষন্ন হয়ে পড়ে এ পথে ধাবিত হচ্ছেন। জীবনে অনেকেই নানা কারণে নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন। আর এসব রোগীদের অনেকেই কাউন্সিলিং সেবা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনছেন রামেক ট্রমা কাউন্সিল সেন্টার।

এ বিষয়ে কথা হয় রামেকের রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টারের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ফারজানা আকতার শ্রাবণীর সাথে। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশে অত্মহত্যার চেষ্টার রোগীর সংখ্যা মোটেও কম নয়। তাঁদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাই অনেক। রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ জন আত্মহত্যা চেষ্টা চালাচ্ছে, সেটি ভাবিয়ে তুলেছে। আর এর প্রধানতম কারণই হচ্ছে মানসিক রোগ বা মানসিক সমস্যা।

তিনি বলেন, এসব রোগীদের সাইকোলজিস্টের কাছে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে।  বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ ও ভয়ংকর কাজটি যারা করেন, তাঁদের ৯৫ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রয়েছে। তাঁরা যদি মানসিক চিকিৎসা নেন, তাহলে এ প্রবণতা থেকে সহজেই বের হতে পারবেন। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে আত্মহত্যার ঝুঁকিও কমানো যাবে। যাঁরা আত্মহত্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন (বিশেষ করে শিক্ষার্থী, নববিবাহিত বা বিবাহযোগ্য বয়সের তরুণী, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, মাদকসেবী, মানসিক রোগী, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার যাঁরা) তাঁদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বা এলাকাভিত্তিক বিশেষ পরামর্শ সেবাপ্রাপ্তির সুযোগের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ট্রমা কাউন্সিল সেন্টারের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক বা কাউন্সিলররা সবাইকে সাধারণভাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধের বিষয়াদি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। পাশাপাশি কারো মধ্যে আত্মহত্যার চেষ্টা বা ইচ্ছা দেখা দিলে তা রোধ করার উদ্যোগ নিই।

ফারজানা বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আত্মহত্যার আগে কিছু ইঙ্গিত দিয়ে থাকে আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষেরা। যেমন প্রায় মৃত্যুর কথা বলা, মরে যাওয়ার কথাও আকার-ইশারায় বলেন। ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কেউ কেউ আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। তখন পরিবার কিংবা আত্মীয়-স্বজন যদি সাইকোলজিস্ট ও সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। তাহলে আত্মহত্যার পথ থেকে অনেকেই ফেরানো সম্ভব হতে পারে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.