রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস এমপিও করাতে শিক্ষকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য


নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মান্থলি পে অর্ডার (এমপিও) ভুক্তকরণে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে কোটি কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিভাগের ৮ জেলায় গত ১ বছরে আড়াই হাজার শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করতে ঘুষ লেনদেন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। শিক্ষা অফিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় এসব দুর্নীতি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নওগাঁর নিয়ামতপুরের বালতর ডিগ্রি কলেজের চারজন শিক্ষকের এমপিওভূক্তির জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার করে মোট ২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।

বগুড়া অর্নেশন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩ লাখ টাকা, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা কলেজ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি মহিলা কলেজ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে।

এসব টাকা নগরীর সাহেব বাজারের এক মুদি দোকানদারের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল মহিলা কলেজের শিক্ষকদের এমপিও করতে ২ লাখ টাকা চুক্তি হয়। তবে টাকা না পাওয়ায় ফাইল আটকে রাখা হয়েছে। টাকা না দেয়ায় সিরাজগঞ্জের সলপ কলেজের শিক্ষকদের ফাইলও একইভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব দুর্নীতির মূলে রয়েছেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক অধ্যাপক ড. কামাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ। এদের মধ্যে ড. আবু রেজা আজাদ একসময় গাইবান্ধার এক বেসরকারি কলেজে কর্মরত ছিলেন। কলেজটি জাতীয়করণের পর ক্যাডার হিসেবে আত্তিকৃত হয়ে ২০১৭ সালে তিনি সহকারী অধ্যপক হিসেবে পদোন্নতি পান।

এরপর নিজেও ঘুষ প্রদান করে, তদবিরের মাধ্যমে ডেপুটেশনে রাজশাহী শিক্ষা অফিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ নিয়ে আসেন। তিনি পরিচালক ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মিলেমিশে একজন প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থের বিনিময়ে এমপিভুক্তির কাজগুলো করে থাকেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস রাজশাহীর কর্মকর্তারা সাধারণ শিক্ষকদের নানানভাবে হয়রানি করেন। তার এলাকার কয়েকজন শিক্ষককে হয়রানি করা হয়েছে বলেও জানান রাবির এই অধ্যাপক। তিনি আরো জানান, অযোগ্যদেরও বেতনভাতা ও স্কেল লাগানোর ব্যবস্থা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা করে দিয়েছেন টাকার বিনিময়ে।

একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, এসব কাজের সুপারিশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেন একজন প্রতিমন্ত্রী। তার বক্তব্য নেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। যদিও সেই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় আড়াই হাজার প্রভাষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১২ কোটিরও বেশি টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। অথচ যোগ্যতা অনুযায়ী ও শর্ত পূরণ করলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তাদের এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস রাজশাহীর পরিচালক প্রফেসর ড. কামাল হোসেন বলেন, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গত মার্চ মাস থেকে এমপিওভূক্ত কার্যক্রম চলছে। সব আবেদন অনলাইনে করা হয়।

এখানে আর্থিক লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। আর প্রতিমন্ত্রীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে কিছু সুপরিশ তো আসেই, অনেক চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়।

এদিকে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার আহবান জানিয়েছেন রাজশাহী মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনরা।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার ইকবাল বাদল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে অবিলম্বে দুর্নীতি দমন কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দরকার। দুর্নীতিবাজদের লাগাম টানা না গেলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। এ অফিসে যারা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা দেশের একজন প্রতিমন্ত্রীর আশ্রয়ে রয়েছেন। যা খুবই নিন্দনীয়।

অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দেশের উন্নয়নকে আরো বেগবান করতে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকার্তাদের অপসারণ করা সময়ের দাবি। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। অন্যথায় এ দুর্নীতিবাজরা দেশকে তলানিতে নিয়ে যাবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি সাইদুর রহমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.