রাজশাহীর পুঠিয়ায় অতিথি পাখির গ্রাম পঁচামাড়িয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবছর শীত মৌসুম আসলেই বিভিন্ন বড় পুকুর, বিল ও জলাশয় গুলোতে নানা রংঙের অতিথি পাখি দেখা যায়। তবে কয়েকটি জাতের অতিথি পাখি স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে রাজশাহীর পুঠিয়া-শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচাঁমাড়িয়া গ্রামে। আর ওই পাখিদের নিরাপদে রাখতে পুরো গ্রামটি অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। আর ওই পাখিদের রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের সাথে কাজ করছেন একাধিক স্বেচ্ছাসেবী কমিটি।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌসুমী রহমান বলেন, উপজেলার মধ্যে শিলমাড়িয়া ইউপি এলাকার অনেক বিলে দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতা থাকে। যার কারণে এই বিল গুলোতে বিভিন্ন রং বেরং এর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
এর মধ্যে শামুককৌড়, বুনো হাঁস, ছোট সারস, বড় সারস পাখি, চামুচমূখ, পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি রয়েছে। এছাড়া শীত মৌসুমে বিলুপ্ত প্রায় উদয়ী গয়ার ও প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) জাতের পাখিদের দেখা মিলে।
শিলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, গত কয়েক দশক থেকে এই ইউনিয়ন এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে।
তবে প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে পাখি আগমনের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। তবে পচাঁমাড়িয়া পুরো গ্রাম জুড়ে পাখিদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। পরিষদের পিছনে বাগান গুলোতে অতিথি পাখিদের নিরাপদে বসবাসের জন্য ওই এলাকা নির্ধারিত। সে লক্ষ্যে গত ২০০৪ সালে পচাঁমাড়িয়ার ১ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাখিদের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়।
আর পাখিপ্রেমী ও দশনার্থীদের জন্য ইউপি ভবনের পাশেই একটি আধুনিক মানের ওয়াচ ট্ওায়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সাথে অতিথি পাখিদের সুরক্ষার জন্য ২০০৫ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“পাখি সুরক্ষা” কমিটির লোকজন সব সময় দেখভাল করছেন। সেই সাথে শিকারীদের হাত থেকে অতিথি পাখি গুলো রক্ষায় গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করছে। তবে মাঝে মধ্যে দুই একটি বহিরাগত শিকারীরা অতিথি পাখি শিকার করার চেষ্টা করেন। তবে আমাদের কমিটির লোকজন তাদের আইনের আওতায়ও আনছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পচাঁমাড়িয়া এলাকা পাথিদের জন্য একটি অভয়াশ্রম রয়েছে। সেই সাথে উপজেলার সর্বত্রই পাখিদের রক্ষায় স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছেন।
তিনি বলেন, বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, পরিযায়ী বা অতিথি পাখি হত্যার দায়ে একজন শিকারীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সে ক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার আইন প্রচলিত রয়েছে।
এছাড়া পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচা ও আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু  বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুম আসলেই উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন প্রকার অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তবে শিলমাড়িয়া এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতা থাকায় সেখানে বছরের বেশির ভাগ সময় অতিথি পাখি গুলো অবস্থান করেন। এর মধ্যে শামুককৌড়, বুনো হাঁস ও সারসসহ কয়েকটি জাতের পাখি স্থায়ী ভাবে বসবাস করছে। সেই সাথে ওই পাখি গুলো ডিম ও বাচ্চা দিচ্ছে।
এলাকাবাসীদের বলতে চাই অতিথি পাখি গুলো আত্নরক্ষার জন্য হাজার মাইল পথ বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকে আমাদের দেশে আসছে। সেগুলোকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.