রাজশাহীতে নদী রক্ষায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদকরাজশাহীতে নদী দখল, দূষণ ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার পরিবেশবাদী ছাত্র-যুব সংগঠন ‘গ্রীণ ভয়েস’ দেশব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।

তারই ধারাবাহিকতায় সকাল ১০টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন করেছে ‘গ্রীণ ভয়েস’ রাজশাহী বিভাগীয় কমিটি।

মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান। ‘গ্রীণ ভয়েস’ সদস্য আব্দুর রহিমের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, গ্রীণ ভয়েস রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক রুবেল হক, সহ-সমন্বয়ক জহুরুল ইসলাম, প্রসেনজিৎ স্বর্ণকার, সদস্য ইশরাত জাহান, হীরা বালা, বাধন প্রমূখ।

মানববন্ধনে বক্তাগণ বলেন, একাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় হাজার। নদীগুলো ছিল প্রশস্ত, গভীর ও পানিতে টইটুম্বুর। সারা বছর নাব্যতা থাকে তেমন নদীর সংখ্যা বর্তমানে সবমিলিয়ে প্রায় ২৩০টি।

বর্তমানে এই স্বল্পসংখ্যক নদী বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। নদীগুলোর মধ্যে ১৭টি নদী শুকিয়ে একেবারেই নদীচরিত্র হারিয়ে ফেলেছে। দেশে সর্বোচ্চ ১০০টি নদীর নৌ-চলাচলের উপযোগী প্রশস্ততা ও পানির গভীরতা রয়েছে। ১৯৭১ সালের তুলনায় দেশের ৯০ ভাগ নদীপথ হ্রাস পেয়েছে।

নদী বিপর্যয়ের কারন উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, উজানের পানির প্রবাহ হ্রাস, পলি পতন, নদী- ভাঙ্গন, বেষ্টনী স্থাপনা (ঈড়ৎফড়হ ঝঃৎঁপঃঁৎব), নদী দখল, নদী দূষণ ইত্যাদি নদী ও পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারন। নদীর তীরে রাষ্ট্রীয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে অবারিতভাবে।

উচ্চ আদালতের রায় মতে নদীর তলা (শীতকালের পানি স্থল), তট (বর্ষা কালের পানি স্থল) ও পাড় (১৫০ ফুট মাটি যেখানে কোন দিনই পানি উঠেনা) এই জায়গাগুলো নদীর অন্তর্ভূক্ত। এসব জায়গাতে স্থাপনা নির্মান নিষিদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তারা আইন অমান্য করে সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

নদী রক্ষায় সরকারের উদাসীণতা কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, নদীর সকল সমস্যায় করণীয় হিসেবে দীর্ঘ দেড় যুগ আলোচনার পর কয়েক বছর আগে গৃহিত হয়েছে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ আইন ১৯৯৭।

যা অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নদীসমূহের সকল প্রকার সংকট নিরসন সম্ভব। বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারের এটি পছন্দ নয়, তারা এটি অনুস্বাক্ষর করেননি। অথচ আন্তঃদেশীয় যে কোন নদী সমস্যা নিরসনে এটিই একমাত্র উপায়।

বক্তারা বলেন, উজানের রাষ্ট্রসমূহের সাথে নদীর পানি ব্যবহার প্রশ্নে সংকট, দেশের অভ্যন্তরে ভুল প্রকৌশল কার্যক্রম জনিত কারণে বাংলাদেশের সকল নদী আজ ধ্বংসের মুখে। ভুল বিদেশী পরামর্শে নদীর উপর সুইসগেইট, মাটির বাঁধ, খাটো দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মান করে নদী ধ্বংস করেছে সরকারী প্রশাসন।

বক্তারা আরো বলেন, একই ভুল নীতি অক্ষুন্ন রেখে বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ নিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। এই পরিকল্পনায় নদী স্বার্থ বিরোধী বিষয়গুলোর পরিবর্তন না করলে বদ্বীপ পরিকল্পনাও সফল হবেনা।

একদিন ধ্বংস হবে সকল নদী, ধ্বংস হবে সুজলা সুফলা বাংলাদেশ। দেশ বাঁচাতে নদী ও পরিবেশ রক্ষায় দেশের জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।#

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.