রাজশাহীতে কৃষকদের দুর্ভোগ ও অলাভজনক হওয়ায় কমছে আঁখ চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষকরা লাভবান হওয়ার জন্য আঁখ চাষ করেন। কঠোর পরিশ্রম ও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে।।সেই কৃষক যদি নায্য মূল্য না পায় না সময়মত টাকা না পান তবে কি কৃষক আঁখ চাষ করবেন?
অন্যান্য ফসলের চেয়ে আঁখ চাষে অধিক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয় উৎপাদনে যেতে। খরচও কম নয়। এরমধ্যে রয়েছে কাঙ্খিত উৎপাদন না হওয়ার শঙ্কা। উৎপাদন ভালো হলেও নায্য দাম না পাওয়ার শঙ্কা। তবে শতশঙ্কা কাটিয়ে উৎপাদিত আঁখ মিলারদার কাছে পৌঁছে দিয়েও স্বাস্থি পান না আঁখ চাষীরা। আঁখ বিক্রয় করা অর্থ হাতে পেতে আবারও গুনতে হয় অপেক্ষার প্রহর। এমন নানা কারণেই রাজশাহীতে কমছে আঁখ চাষ। তবে সার্বিক আঁখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমলেও ‘রংবিলাস বা ইশরদী-৪২’ আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষক বলে জানা যায়।
রাজশাহী অঞ্চলের আখচাষিরা বলছেন, আগে প্রচুর আঁখ লাগাতাম। কিন্তু এখন সময় মতো টাকা না পাওয়ায় চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। মিলে আঁখ দেওয়ার পর অনেক ঘোরাঘুরি করেও টাকা পয়সা ঠিক মতো পাওয়া যায় না। মিলাররা সময় মতো আঁখের মূল্য পরিশোধ করতে চায় না। বছর ধরে আঁখের পরিচর্যা করে এমন দূর্ভোগের চেয়ে অন্যান্য ফসলের আবাদ করে তারা লাভবান হচ্ছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহীতে ইশরদী-৩০ থেকে শুরু করে ৪৬ পর্যন্ত জাতের আঁখ আবাদ করা হচ্ছে। গতবছর ৯ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আঁখের আবাদ করা হয়েছিলো। যেখানে উৎপাদন ছিলো ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৮৮ মেট্রিক টন। এবছর আঁখের আবাদকৃত জমি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮৬৭ হেক্টর। যেগুলো এখনও উৎপাদনে যায় নি।
পবা উপজেলার একজন আঁখ চাষী বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি গত বছর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে আঁখের আবাদ করেছিলেন। এবছর কমিয়ে ১ বিঘা জমিতে করেছেন। আখচাষ একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। আখচাষ মানেই হয়রানি। টাকার জন্য মিলে দিনের পর দিন ধরনা দিতে হয়। আবার বছর ধরে জমিতে পরিচর্যা করতে হয়। কিন্তু সেই তুলনায় যে টাকা হাতে আসে সেটা দুঃখজনক। এখন আঁখের জমিতেই ধানের আবাদ করছেন। একবার আঁখ চাষের সময়ে এখন দুইবার ধান ঘরে তুলতে পারেন।
এদিকে, যখন আঁখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমছে তখন অনেকেই ‘রংবিলাস বা ইশরদী-৪২’ জাতের আঁখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এই আঁখ নগরীর বাজারগুলোতে পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এই আঁখ প্রতিপিস ২০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষী হাফিজুল ইসলাম জানান, তার এবার তিন বিঘামতো রংবিলাস আঁখ ছিলো। এই আঁখ চাষে প্রতিবিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মতো বিক্রিও করা যায়।
রাজশাহী মহানগরীর একজন ফল ভান্ডারের মালিক বিটিসি নিউজকে জানান, তার আড়তে প্রতিদিন এক থেকে দুই ট্রাক রংবিলাস ও বাবুলাল জাতের আঁখ আসে। প্রতিপিস আঁখ তারা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় পাইকারি বিক্রি করছেন। এই আঁখের চাহিদা ভালোই আছে। তবে গত কয়েকবছরের চেয়ে দাম কিছুটা কমেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জেকেএম আব্দুল আওয়াল বিটিসি নিউজকে জানান, আঁখ চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমে যাওয়ার বেশকিছু কারণ আছে। একবার আঁখ চাষ করতে প্রায় বছরের মতো সময় লেগে যায়। যেখানে কৃষকরা দুই থেকে তিনবার ধানের আবাদ করতে পারে। আবার ধানের দামও ভালো। এরমধ্যে যারা আঁখ আবাদ করছে বিক্রি করে টাকা সময় মতো পাচ্ছে না। মিলারদের থেকে কয়েকটি ধাপে টাকা পেতে অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। একারণেই আঁখের আবাদ কমেছে রাজশাহীর প্রতিটি উপজেলা,ইউনিয়নে বা জেলাতে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.