রাজধানীতে পুলিশ পরিচয়ে দেড় হাজার ছিনতাই, নারীদের হয়রানি

ক্রাইম (ঢাকা) রিপোর্টার: আচমকা রাস্তায় পুলিশ পরিচয়ে গতিরোধ করে নিজের মোটরসাইকেলে তুলে নিতেন শাকিল আহম্মেদ রুবেল। এরপর নির্জন কোনো স্থানে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নিতেন, নারী ভিকটিমদের নিয়ে হয়রানিও করতেন।
তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের সামনে পুলিশের স্টিকার, হাতে ওয়াকিটকি, কোমরে পিস্তল ও চালচলনে পুলিশ মনে হওয়ায় ভিকটিমরাও তার ফাঁদে পড়তেন। তাকে শনাক্ত করার আগেই অভিনব পন্থায় অন্তত দেড় হাজার ছিনতাই ও ৫০ জন নারীকে হয়রানি করেছেন তিনি।
রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে  ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চার জনকে গ্রেফতারের পর এসব কথা জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেফতাররা হলেন- মো.শাকিল আহম্মেদ রুবেল (২৮),  মো. আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও মো. হাবিবুর রহমান।
শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি উত্তরা বিভাগ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, একটি ওয়ারলেস সেট, একটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
ডিবি জানায়, গ্রেফতারের আগে দেড় হাজার ছিনতাই করা রুবেলের মূল টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে সে গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। সেই মোটরসাইকেলে পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির ঐ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করে।
রুবলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি রুবেলের বাড়ি গাজীপুর, তবে আরো দু’টি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি।  রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেয়নি। সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতো। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ঘটনা ঘটাতো।
তিনি বলেন, রুবলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের পর ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতো এই জন্য যে তারা যেন লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে বা অভিযোগ না করে।
ছিনতাইয়ের জন্য রুবেল নির্জন স্থান বেছে নিতো জানিয়ে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মেয়েদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচল এলাকায় নিয়ে যেতো। তার নামে ছিনতাইয়ের ছয়টি মামলা রয়েছে। সে একাধিকবার জেলেও গিয়েছে। তাকে এবং তার সহযোগীদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করব।
ডিবি প্রধান আরো বলেন, আমরা অনুরোধ করবো কেউ পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেল কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেল করে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে।
ঢাবির এক শিক্ষার্থী কীভাবে এতো সহজে রুবেলের খপ্পরে পরে যায় জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, আসলে তার হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই শিক্ষার্থী তাকে পুলিশ ভেবে নেয়। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করতো তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।
তার চার সহযোগীদের কি কাজ ছিল জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, তারা রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগীতা করতো। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিতে আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগীতা করতো।
ভুয়া পুলিশের ঘটনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে আটকানো যাচ্ছে কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব ঘটনায় অনেকে মামলা করতে থানায় যায় না। মামলা করলে এসব বিষয়ের শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মামলা না হলে তো আমরা এসব বিষয় জানতে পারি না। রিমান্ডে এনে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ক্রাইম (ঢাকা) রিপোর্টার স্বপন বালমেকী / ঢাকা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.