রংপুরে এনজিও আশার বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ, প্রতিকার চেয়ে ডিসির কাছে লিখিত আবেদন

রংপুর ব্যুরো: বেসরকারি সংস্থা এসোসিয়েশন ফর সোস্যাল এ্যাডভ্যান্সমেন্ট-আশা’র রংপুরের বাহার কাছনা শাখায় অনিয়ম, দুর্নীর্তি, চড়া সুদ, ফাঁকা  ষ্ট্যাম্পে সইয়ের মাধ্যমে কথিত ঝুঁকিপুর্ন অজুহাতে অসহায় হতদরিদ্র গ্রাহকদের ঋণ না দেয়া, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিটে মাটি ছাড়তে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন কায়দায় গ্রাহকদের হয়রানির গুরতর অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে ওই শাখার হয়রানির শিকার গ্রাহকরা ডিসির কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।  ডিসির কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগ এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে,

সরেজমিন অনুসন্ধানে রংপুর মহানগরীর ৯ নং ওয়ার্ডের তকোয়ারপাড় এলাকার মৃত্যু আনারুল ইসলামের পুত্র পত্রিকা হকার রাশেদ মিয়া জানান, গত ২৫-০২-২০১৯  সালে সৌরভ ভূমিহীন মহিলা সমিতির আওতায় ঋণ সদস্য (নং ২৩৮৬৯) হিসেবে আশা এনজিওতে ভর্তি হয়ে পত্রিকা হকারির ক্ষুদ্র ব্যবসা চালু করি। এর পর থেকে আশার সকল প্রকার নিয়ম কানুন মেনে সঞ্চয় প্রদান, ফাঁকা ষ্ট্যাম্প ও ফাঁকা চেকের পাতায় সই দিয়ে ঋণ গ্রহন করে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে আসতেছি। নিয়মানুযায়ী ঋণের টাকা শোধ হওয়ার পর এপ্রিল মাসে আমি আবারও ঋণের জন্য বলি। কিন্তু মাঠ কর্মি নাহিদা পারভীন ও শাখা ব্যাবস্থাপক ইজাজুল ইসলাম আমাকে ঋণ দেয়ার কথা বলে টালবাহনা শুরু করেন। ম্যানেজার ও  মাঠকমীর দাবি অনুযায়ী আমি স্থানীয় ৪ জন গন্যমান্যবক্তি নুর ইসলাম, মেজাবহুর রহমান, আজিজুল ইসলাম, আইনুল ইসলামকে গ্যারান্ডার হিসেবে অফিসে নিয়ে যাই। কিন্তু তারা এসব গ্যারন্টারকে গ্রহন করে না।

রাশেদ জানান, আমি দীর্ঘদিন থেকে পত্রিকার হকারি করে আমার মাকে নিয়ে জীবন যাপন করি। কিন্তু ঋণ না দেয়ায় আমার পত্রিকা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আশার সকল নিয়ম কানুন আমি মেনে চলছি। কিন্তু তারা কেন আমাকে ঋণ না দিয়ে পথে বসাতে চাইছে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। আমি বিচার চেয়ে ডিাসর কাছে লিখিত আবেদন করেছি।

এ ব্যপারে আশার সৌরভ ভূমিহীন সমবায় সমিতির সভানেত্রী চমন আরা বিটিসি নিউজকে জানান, রাশেদ আমার ভালো সদস্য। ও সব সময় ঠিক সময়ে কিস্তি দিয়েছি। আমিও আবারও তাকে ঋণ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু অফিস দেয়নি। এখানে আমার করার কিছু নেই।

ওই শাখার আওতাধীন শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আফরোজা বেগম বিটিসি নিউজকে জানান, আমি গত ১০ বছর আগে আশা এনজিওতে সদস্য হয়েছিলাম। সদস্য হওয়ার পর থেকে আমি নিয়মিত সঞ্চয় প্রদান, ঋণ গ্রহন ও ঋণ পরিশোধ করি। এপ্রিল মাসে অফিসে গিয়ে ঋণের ফরম পূরণ করি। কিছুদিন পর মাঠ কর্মি নাহিদা পারভিন আমাকে অফিসে যেতে বলেন। আমি অফিসে যাই। বেশ কয়েকদিন পর  অফিস থেকে আমাকে জানিয়ে দেয়া হয় তাঁরা আমাকে ঋণ দিতে পারবে না। আমি ঋণ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা কোন কারণ জানাতে বাধ্য নয় বলে আমাকে জানায়। এর পর আমার ফাঁকা চেকের পাতা ও সঞ্চয় ফেরত চাইলে অনেক হয়রানির পরে তা আমি ফেরত পাই।

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে আমার স্বামী ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তিনিও পাত্তা দেন। ওই টাকা নিয়ে আমি আমার বাড়ি করার কথা ছিল। এখন সব নস্ট হয়ে গেলো। আমার আর বাড়ি করা হলো না। এভাবে গ্রাহকদের কেন হয়রানি করছে, এটা আমার বোধগম্য নয়। আমি ঋণের টাকার ব্যবস্থা করার জন্য ডিসির কাছে আবেদন করেছি।

আরেক সদস্য ডাঃ নামজাদ হোসেন বিটিসি নিউজকে জানান, আশার বাহার কাছনা শাখার ম্যানেজার এবং মাঠ কর্মিরা সাধারন মানুষের সাথে কসাইয়ের মত আচারন করেন। এদের কাছে যারা ঋণ নিতে যায়, তাদের আর্থিক দূর্বলতার কারণে তাদেরকে এরা পিষে মারে। আর কথায় কথায় ঝুকিপুর্ন বলে অনেক ভালো সদস্যের ঋণ বন্ধ করে দিয়েছে।

সরেজমিনে এলাকাবাসি জানিয়েছেন, ওই শাখা থেকে ঋণ নিয়ে আসমানী বেগম নামের এক ঋণ পরিশোধ করেও নতুন ঋণ না পাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে মনের দু:খে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এ ব্যপারে আশার বাহার কাছনা শাখায় কথা বলতে গেলে, শাখা ব্যাবস্থাপকের উপস্থিতেই অফিসের মাঠ কর্মি আনোয়ারা বেগম সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে রাগাম্বিত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, আমরা যা করবো তাই সবাইকে মেনে নিতে হবে। এসময় আনোয়ারা বেগম বলেন ফাঁকা ষ্ট্যাম্প এবং ফাঁকা চেকের পাতা নেয়া আমাদের অফিসের নিয়ম। সেই নিয়ম আমরা ফলো করছি। এখানে কারো করার কিছু নেই। বরং লোন না দেয়ায় সদস্য আফরোজার স্বামী শহিদুল তার পিকআপ দিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এ বিষযে থানায় কোন জিডি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, করা হয় নি।

আশার বাহার কাছনা শাখা ব্যাস্থাপক ইজাজুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি বলেন, ঝূঁকিপুর্ন হওয়ায় রাশেদ ও আফরোজাসহ অনেককে ঋণ দেয়া হয়নি। অফিসের নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোন অপশন নাই আমার।

এ ব্যপারে ডিসি এনামুল হাবীব বিটিসি নিউজকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অসহায় দরিদ্রদের উপকারের জন্যই এনজিও কাজ করছে। কিন্তু তাদের দ্বারা যদি কেউ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে কেউ পার পাবে না।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.