যাত্রায় ২৩ ঘন্টা বিলম্ব, বিক্ষুব্ধ যাত্রীদের ভোগান্তি!”ট্রেন ঘেরাও

লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ  ঈদের বিশেষ ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ২৩ ঘন্টা বিলম্ব। তারপরেও স্টেশনে ট্রেন পৌছালেও সেই ঈদ স্পেশাল ট্রেন না ছেড়ে রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওই ট্রেনের ওঠে যাত্রীরা। তাঁরা প্রথমে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে পরে ট্রেনের বগি পরিচ্ছন্ন করার স্থানে (ওয়াশ ফিট) গিয়ে রংপুর এক্সপ্রেসের বগি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকেন যাত্রীরা। ঘন্টা খানেক পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে যাত্রীরা স্টেশনের প্লাটফর্ম এলাকায় চলে যান।
গতকাল সোমবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে লালমনিরহাট রেল স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী যাত্রীরা বিটিসি নিউজকে জানান, ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে ১৮ আগস্টের টিকেট কাটেন যাত্রীরা। ট্রেন ছাড়ার কথা ১৮ আগস্ট রবিবার রাত সাড়ে ৯টায়। যথা সময়ে যাত্রীরা স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেন বিলম্বে ছাড়বে। কিন্ত কত বিলম্বে ট্রেন ছাড়বে সে বিষয়ে জানাতে ব্যর্থ হয় কর্তৃপক্ষ।
এরপর অনেকে রাতে স্টেশনে থেকে গেলেও অনেকে বাড়ি ফিরে যান। পরদিন সকালে আবার এসে যাত্রীরা জানতে পারেন ট্রেন দুপুর ১টায় ছাড়বে। সেই হিসেবে অপেক্ষা করতে থাকেন যাত্রীরা। দুপুর পার হলে আবার রেল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান কখন ছাড়বে ট্রেন। এরপর তাঁদের জানানো হয় সন্ধ্যা ৬টায় ট্রেন ছাড়বে ট্রেন।
এর মধ্যে ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি স্টেশনে আসে। এর প্রায় পনের মিনিট পর রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশনে আসে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ স্পেশাল ট্রেনের বগিগুলো ওয়াশ ফিটে নিলেও সেই বগিগুলো পূণরায় ফিরিয়ে নিয়ে আবার রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি ওয়াশ ফিটে নেয় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনকে ছেড়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন যাত্রীরা।
এ ঘটনা যাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা ওয়াশ ফিট এলাকায় গিয়ে রংপুর এক্সপ্রেসের বগি পরিচ্ছন্নতার কাজে বাঁধা দিয়ে আগে স্পেশাল ট্রেন ছাড়ার দাবি জানিয়ে ক্ষোভ শুরু করে।
যাত্রীদের মারমুখি অবস্থানের একপর্যায়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ অন্যান্য কর্মচারীরা পিছু হটে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শফিকুর রহমানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
এভাবে চলতে থাকে ঘন্টা খানেক। নানা প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে যাত্রীরা প্লাটফর্মে ফিরে যায়।
যাত্রী এনামুল হক বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে দুই সন্তানসহ স্টেশন এলাকায় পড়ে আছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁর সন্তানের স্কুলের পরীক্ষা। এছাড়া তিনি জরিপ অধিদপ্তরের কর্মস্থলে যোগদানের কথা। অথচ গতকাল ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও এখনো ট্রেন লালমনিরহাট স্টেশন ছাড়তে পারেননি। তাঁর স্ত্রীর মত অনেক মহিলা ও শিশু যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এরশাদ, জাহিদুল, মিজানুরসহ আরো অনেকে বিটিসি নিউজকে জানান, তাঁদের ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় চাকরিতে যোগদানের কথা। কিন্তু চাকরিতে সময়মত যোগদান করতে না পারায় অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শফিকুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘রেলওয়ের রুলস্ অনুযায়ী আন্তঃনগর ট্রেনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ট্রেন চলাচলের নিয়ম। সে হিসাবে ঈদ স্পেশাল ট্রেন স্টেশনে আগে আসলেও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনকে আগে ছাড়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে দুটি ট্রেনকে দ্রুত ছাড়ার জন্য দুইটি গ্রুপ করে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।
 আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই ট্রেন দুটি ছেড়ে দেয়া যাবে।’
ট্রেনের শিডিউলের চরম বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গেল লাইনে ট্রেন চলাচল করে এবং ঈদের সময় যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর লালমনিরহাট প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান হাসান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.