মৌলভীবাজারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম আজ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করেছেন।

মন্ত্রী আজ মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে তিনি প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী সভায় জানান, মৌলভীবাজার জেলার জন্য ঈদের পূর্বে ৬০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লক্ষ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঈদের পরে আরও ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী বলেন, বন্যা উপদ্রুত মানুষের সেবায় কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। মানুষ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাবে আর কর্মকর্তারা অফিসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এটা বরদাস্ত করা হবে না।
কতিপয় কর্মকর্তা বন্যা উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন না করায় বন্যা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা প্রতীয়মান হওয়ায় ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ এম এ শহিদ, সায়রা মোহসীন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ্ কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মো. সালাউদ্দিনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এ বছর বন্যা আসার পূর্বে যথেষ্ঠ সময় পাওয়ার পরও পূর্ব প্রস্তুতির ঘাটতি থাকায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৭ জুন পর্যন্ত ৩০টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার ৪০ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ইতোমধ্যে ৭জন বিভিন্ন কারণে মারা গেছেন। তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০ হাজার টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৫০০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯৬০ হেক্টর ফসলী জমি বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে ৯ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ও ৭৪৩ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

মায়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ ভান্ডারে ত্রাণের অভাব নেই। যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশী বরাদ্দ দেওয়া হবে যাতে খাদ্যের অভাবে কেউ কষ্ট না পায়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত। তিনি রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের লোকদের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন যার মাধ্যমে ঈদের পূর্বে কক্সবাজার জেলার ৩৩ হাজার মানুষকে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মৌলভীবাজার পাঠিয়েছেন বন্যার্তদের কষ্টে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাতে এবং সমস্যা সরেজমিন দেখে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে।

মৌলভীবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, সরকার বন্যা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ইতোমধ্যে ২৯ জেলার মধ্যে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা অগ্রিম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দারবন, ফেনী, রাজশাহী, নওগা, যশোর, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার মোট ১৩ জেলার জন্য ২ হাজার ৭শত মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ জেলায় যেসব ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পুূনঃনির্মাণ ও মেরামতের জন্য নতুন করে আরও ১ হাজার বা-িল ঢেউটিন ও নগদ ৩০ লক্ষ টাকার মঞ্জুরীর ঘোষনা দেন মন্ত্রী।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ মাসের শেষের দিকে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই উত্তরাঞ্চলের জেলাসমূহের প্রশাসনকে এখন থেকেই পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি। বিশেষত জেলা প্রশাসকদের অতি শিগগির জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি।
মন্ত্রী পরে বন্যা প্লাবিত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন ও প্লাবিত এলাকার মানুষের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন স্থানে গরীব ও দুস্থ মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন। ( সূত্র: বাসস )#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.