কলকাতা-হাওড়া (পশ্চিমবঙ্গ) প্রতিনিধি: জল্পনার অবসান হলো,কিন্তু বিতর্কের অবসান হলো না। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হলেন শেষ পর্যন্ত মুকুল রায়ই। ভারতের প্রাক্তন রেলমন্ত্রী।
বিজেপি-র তীব্র বিরোধীতা সত্ত্বেও গতকাল শুক্রবার (০৯ জুলাই) রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনের একেবারে শেষ মুহূর্তে চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায়ের নাম ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অথচ আশ্চর্যের বিষয়, মুকুলবাবু আইনত এখন ঠিক কোন দলের বিধায়ক, সেটাই আদৌ স্পষ্ট নয়। কিছুদিন আগেও ছিলেন তিনি বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর রীতিমতো আস্থাভাজন। তাঁদের ইচ্ছাতেই গত বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে লড়াই করে তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে দেন প্রায় ৩৫ হাজার ভোটে। কিন্তু অবাক কান্ড! মাসখানেক পার হতেই তিনি ছেলে শুভ্রাংশুকে নিয়ে আচমকাই ফিরে আসেন নিজের পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে।
স্বাভাবিক কারণেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিজেপি। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ খারিজের দাবি জানান অধ্যক্ষের কাছে। সামনেই সেই আবেদনের শুনানির দিন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, মুকুল রায় বিজেপি ছাড়লেও বিধানসভায় এখনও বসছেন কিন্তু বিরোধী বেঞ্চেও। এমন অস্পষ্ট অবস্থানের মধ্যে তাঁকে কীভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হলো সেই প্রশ্ন তুলে তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়ে বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়করা।
এদিকে দিনকয়েক আগে স্ত্রীর মৃত্যুতে কার্যত বাকরুদ্ধ মুকুল রায়। কাঁচরাপাড়ার বাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে জানা গেছে, আইন বাঁচিয়েই মুকুলকে এই পদে বসিয়েছেন অধ্যক্ষ। বিরোধী পক্ষের হাতে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদটি তুলে দেওয়ার রীতি থাকলেও এ ব্যাপারে তেমন কোনও সুনির্দিষ্ট আইন নেই। তাছাড়া দলত্যাগ বিরোধী আইনে কে বিধায়ক পদ খোয়াবেন কিংবা ঐ পদে বহাল থাকবেন,তা সম্পূর্ণ অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত। এটাই তৃণমূলের যুক্তি।
কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, সরকারি খরচ নিয়ে বিরোধীরা যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারেন, তাই এই কন্ঠরোধের কৌশল। লক্ষ্যণীয়, এই পদে মুকুলবাবুর নাম কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস বা বিজেপি, কোনও পক্ষই প্রস্তাব করে নি। প্রস্তাব করেছিলেন কালিম্পঙের এক গোর্খা বিধায়ক, এক নির্দল বিধায়ক এবং এগরার এক তৃণমূল বিধায়ক।
দলের জন্মলগ্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন এই মুকুল রায়ই। রাজ্যসভার সদস্য এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়েছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেকের উত্থানের পর থেকেই শুরু হয় তাঁর মান-অভিমানের পালা।
২০১৭ তে তৃণমূল ছেড়ে সদলবলে যোগ দেন বিজেপিতে। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর মুন্সীয়ানাতেই রাজ্যে ১৮ টি আসন পেয়ে বিজেপি কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় তৃণমূলের দিকে। কিন্তু এবারের বিধানসভা ভোটে বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে না পারায় নিজেকে দ্রুত বদলে ফেলেন মুকুল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই প্রবীণ নেতা আবার ফিরে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে। পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ সম্ভবত তারই প্রথম পুরস্কার।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.