মিয়ানমারে মোখায় মৃত্যু বেড়ে ২০২

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০২ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য রাখাইনের মানুষ এখন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামতের চেষ্টা করলেও অর্থাভাবে তারা তা করতে পারছেন না। জান্তা সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন সাহায্যও পায়নি তারা।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, একেতো দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি তাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে,তারওপর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর নির্মাণে কোন অর্থের ব্যবস্থা করতে পারছেন না। এ অবস্থায় তাদের জীবন আর চলছে না। স্থানীয় সংবাদপত্র ইরাবতী জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতবিক্ষত রাজ্যটি শক্তিশালী এই ঝড়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
গত রবিবার বিকালে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৯৫ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে রাখাইনে আঘাত হানে মোখা, এখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর ঝড়টি প্রতিবেশী চীন রাজ্য এবং সাগাইঙ্গ ও মাগউই অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিত্তুয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ঝড়ে শহরটির বেশিরভাগ ঘরবাড়ির ছাদ উড়ে যায় এবং এটি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। 
সোমবার মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাখাইনের ১৭টি ছোট শহরকে দুর্যোগ কবলিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছে। এই এলাকাগুলোর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীগুলো ঝড় সৃষ্ট আবর্জনা পরিষ্কার করেছে এবং স্থানীয় দাতব্য সংস্থাগুলো জরুরি ত্রাণ বিতরণ করেছে।
তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর তিন দিন পার হলেও আন্তর্জাতিক সংস্থা অথবা সামরিক জান্তার কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাননি তারা।  ম্রাউক-ইউ শহরের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, ম্রাউক-ইউ শহরের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের তাদের ঘরবাড়ি মেরামত করার সামর্থ্য নেই আর তারা শুভাকাঙ্খীদের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে। মোখায় ম্রাউক-ইউ শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে।
এখানকার বাসিন্দারা প্রধান যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা হল পণ্যের অতিরিক্ত দাম। টিন ও চালের কাঠামো বানানোর লোহার অ্যাঙ্গেলের দাম পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা।
পোন্নাগিউন তরুণ সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, “পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, যারা গরীব তারা এভাবেই থাকতে বাধ্য হয়।”
তিনি জানান, দমকল কর্মীরা ও কিছু পুলিশ শহরের আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজে সাহায্য করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপরই নির্ভর করছে। “পোন্নাগিউনের গ্রামগুলোর জন্য জরুরিভিত্তিতে খাবার পানি দরকার, কারণ জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানিতে সব কূপ নষ্ট হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।
রাখাইনের প্রতিবেশী চীন রাজ্যে মোখার আঘাতে এক হাজার দুইশরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মঙ্গলবার জাতিসংঘ জানিয়েছে। একইদিন মিয়ানমারের বেসামরিক ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) জানিয়েছে, রাজ্যটিতে ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১১৩৬টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.