মরুদেশ দুবাইয়ে কেন এত বৃষ্টি, ভয়ানক বন্যা?

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রবল বৃষ্টিতে ভাসছে দুবাই। শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। ঝাঁ চকচকে শপিং মল থেকে হাইওয়ে, সর্বত্র পানি থইথই করছে। বিপর্যস্ত বিমানসহ সকল পরিবহন পরিষেবা। দুবাইয়ের পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যান্য এলাকাও তলিয়ে গেছে।
মরুভূমির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। আর সেই দেশটিতেই এখন প্রবল বৃষ্টিপাত, ভয়াবহ বন্যা। গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুবাইয়ের বিরল এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
তাতে দেখা যায়, রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বিমানবন্দর সব পানিতে টইটুম্বুর। কোমর পানির স্রোতে খেলনার মতো ভাসছে বুগাতি, ফেরারি ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো দামি দামি গাড়ি।
বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও নিস্তার পায়নি। রানওয়ে থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে ঢোকার রাস্তা, গাড়ি পার্কিংয়ের এলাকা সবই পানির নিচে। ফলে থমকে গেছে বিমান ওঠানামা। থমকে গেছে পুরো শহর।
সংযুক্ত আরব আমিরাত আবহাওয়া দফতর বলছে, গত ৭৫ বছরে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়নি। প্রশ্ন হলো, মরুর দেশে হঠাৎ কেন এত বৃষ্টিপাত? এর জন্য ‘ক্লাউড সিডিং’কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘনীভবন প্রয়োজন হয়। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি না হলে ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড ব্যবহার করে মেঘের ঘনীভবন ঘটানো যায়।
ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস ৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। ভেসে থাকা মেঘের ওপর এই ড্রাই আইসের গুড়া ছড়িয়ে দিলে সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে। এই প্রক্রিয়াকেই ক্লাউড সিডিং বলা হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলতি সপ্তাহে যে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, এর মূল কারণ ক্লাউড সিডিং। পানির নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০২ সাল থেকে অর্থাৎ গত প্রায় ২২ বছর ধরে এই ক্লাউড সিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে দেশটির সরকার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া বিভাগ ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি বৃষ্টি নামানোর লক্ষ্যে গত সোমবার ও মঙ্গলবার (১৫ ও ১৬ এপ্রিল) আল আইন বিমানবন্দর থেকে ক্লাউড সিডিং বিমান প্রেরণ করে। এর ফলে এই দুইদিন ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন যখন দাবদাহের কারণে ওষ্ঠাগত তখন এই বৃষ্টিপাতকে আল্লাহর ‘আশীর্বাদের বৃষ্টি’ বলে অভিহিত করে দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় তাতে ব্যাপক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে চরম বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটির সরকার।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিবেশী দেশ ওমানেও প্রবল বর্ষণ হয়েছে। দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড বন্যা। যার ফলে দেশটিতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতেও ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.