ভোগান্তীর অপর নাম নওগাঁ পাসপোর্ট অফিস : আটক ৩

 

নওগাঁ প্রতিনিধি: ভোগান্তীর অপর নাম পাসপোর্ট অফিস। টাকা ছাড়া যেন কোন কাজই হয়না সেখানে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জোগসাজসে সেখানে গড়ে উঠেছে দালালদের একটি সিন্ডিকেট। পাসপোর্টে সেবা নিতে আসা জনসাধারন একপ্রকার তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যেন অনিয়ম ও দূর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে অফিসটি। আর এমন অভিযোগ নওগাঁর পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

পাসপোর্ট অফিসের সুমন নামে এক দালালের খপ্পড়ে পড়ে হয়রানির শিকার সেবা নিতে আসা এক মহিলার ৫মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে  গতকাল সোমবার থেকে ভাইরাল হয়েছে। তবে ওই মহিলার ভিডিওটি গত এক মাস (০৫/০৯/১৮) আগের হলেও সোমবার সেটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ওই মহিলার নাম ও পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

ওই মহিলাকে বলছেন ‘ছেলে অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা করতে হবে এবং পড়াশুনার জন্য স্কলার শিপে বাহির বাহিরে যাবেন। আমাকে (সুমন) টাকা দেন সব কিছু ওকে করে দিব। প্রত্যেকটা জায়গায় শুয়োরের বাচ্চারা–আমি স্কুল ছেড়ে শুধু তাদের কাছে দৌড়াচ্ছি। এক পর্যায়ে মহিলা ক্ষিপ হয়ে সুমনকে মোবাইল ছুড়ে মারে। এবং দুজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।’

এ ঘটনার সাথে পাসপোর্ট অফিসের উজ্জল নামে এক কর্মচারী সম্পৃক্ত পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের জিম্মিদশা থেকে রক্ষাপেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সেবা নিতে আসা জনসাধারন।

ঘটনার পর থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডার এলাকার ফটোকপির দোকানগুলো বন্ধ ছিলো। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পাসপোর্ট অফিসের নিচে স্ট্যাম্প ভ্যান্ডর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান। এসময় তিনি দালালদের উদ্যেশ্যে বলেন, আপনারা যদি ২০০ টাকার লোভ সামলাতে পারেন তাহলে আমাদের অনেক টাকা বেঁচে যাবে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ওই এলাকায় সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট লিটন চন্দ্র দে এক অভিযান পরিচালনা করে দালাল চক্রের তিন সদস্যকে পাঁচদিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমান আদালতে।

আটককৃতরা হলেন, সদর উপজেলার হাট-নওগাঁর মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম, শহরের চকদেব পাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে আল মাসুদুর রহমান, সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের নজরুল ইসলামে ছেলে শফিকুল ইসলাম।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসের নিচে স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও ফটোকপির দোকান। আর সুযোগে স্ট্যাম্প ভেন্ডার বিক্রেতারা সহজেই পাসপোর্ট অফিসের কাজ করতে পারেন। ফলে সেখানে এক দালাল চক্রের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আর এ দালালের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। দালালরা টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে সহজেই কাজ করে নিতে পারেন। পাসপোর্ট করতে আসা জনসাধারন পাসপোর্ট অফিসের আবেদনপত্রে জন্ম সনদ, বয়স, সত্যায়িতসহ বিভিন্ন ধরনে ভুলভ্রান্তি ধরেন। এ কারণে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে দালালদের সরনাপর্ন হন। দালালরা এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নেন।

জানা গেছে, সাধারণ পাসর্পোটের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ও জরুরির ভিত্তিত্বে ৬ হাজার ৯শ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। আবেদনপত্রের কাগজপত্র সহ আনুষঙ্গিক প্রায় ১শ টাকা খরচ হয়। নিয়মানুযায়ী সাধারণ পাসপোর্ট এক মাস ও জরুরি দুই সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহের কথা। সেবা নিতে আসা জনসাধারনের কাছ থেকে প্রতি ফরমে ১ হাজার টাকা করে পাসপোর্ট অফিসে দিতে হয়। আর এ কাজটি সরাসরি অফিসের কর্মচারীরা করে থাকেন। আর কোন ফরম কে দেখবেন একটি সাংকেতি চিহ্ন তারা দিয়ে রাখেন। যেটা অফিসের কর্মচারীরাই বুঝবেন। আর সপ্তাহ শেষে বুধবার সেই টাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয় বলে জানা গেছে। আর দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে গেলে ৬ হাজার ৫শ টাকা গুনতে হয়।

জেলার মান্দা উপজেলার মোকছেদ আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, সোমবার তার জামাইয়ের ছোট ভাই (কামাল হোসেন) এর জন্য পাসপোর্ট করতে আসেন। এক দালাল এসে ফরম পূরন করে দিবে বলে ১ হাজার ৩শ টাকা চাই। এরপর তিনি নিজেই ফরম পূরণ করে অফিসে জমা দিতে গেলে ছবির উপর সত্যায়িত করা হয়েছে মর্মে ভুল ধরে বসে। পরে এডিসি স্যার (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) কে বললে ফরমটি অফিস জমা নেয়।

রানীনগর উপজেলার কালিগ্রাম গ্রামের আরিফুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, আজ মঙ্গলবার তিনি পাসপোর্ট করতে আসেন। অফিস বিভিন্ন ভূল ধরে বসে। পরে মাসুদ নামে এক দালালের মাধ্যমে ৭ হাজার টাকায় পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন।

নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সকহারী পরিচালক সচিব কুমার আইন বিটিসি নিউজকে বলেন, যে মহিলার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তিনি তার সেবা গ্রহণ করে পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেছেন। সম্ভবত তার ছেলের পাসপোর্ট হবে। আর এ ঘটনার সাথে উজ্জল নামে এক কর্মচারী সম্পৃক্ত পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি সঠিক ভাবে ফরম পূরণ এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেন পাসপোর্ট অফিস সেই ফরম জমা নিতে বাধ্য।

সেবা গ্রহীতাদের উদ্যেশে তিনি বলেন, আমার অফিসের কোন কর্মচারী যদি টাকা নেয়ার সাথে সম্পৃক্ত থাকে বা টাকা চেয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে সরাসরি অফিসে অভিযোগ করবেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে তার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সেবা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, স্ট্যাম্প ভেন্ডার এলাকায় কয়েকটি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.