ভিভো শোরুমের ৩৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে ছিনতাইয়ের নাটক (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীর অলকার মোড়ে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দিন-দুপুরে ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে পুলিশ বলছে, টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই ছিনতাই নাটক সাজানো হয়েছিল। পরের দিন গতকাল শুক্রবার (১৯ জুন) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আসামীদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। আসামীদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ডের আবেদন করা হয়েছে।

 গ্রেফতাকৃতরা হলেন: ভিভো শো-রুমের কর্মচারী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান ফয়সাল (২৬), ভিভো শোরুমের ম্যানেজার গোদাগাড়ীর পলাশি এলাকার আক্তার হোসেনের ছেলে জাফর ইকবাল (২৮) ও ভিভো শোরুমের কর্মচারী নগরীর উপকণ্ঠ নওদাপাড়া এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে তাইজুল ইসলাম ডলার (২৪)।

তবে মূল পরিকল্পনাকারী ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকের চালক আরিফুল ইসলাম ওরফে ডলার (২৪) কে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। একই সাথে যার বাড়ি থেকে কথিত ছিনতাইয়ের ৩২ লাখ টাকা লুকিয়ে রাখা ছিলো সেই অহিদুল ইসলামকেও (২২) গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তাদের ধরতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার (১৯ জুন) বেলা ১১টায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান বোয়ালিয়া জোনের উপপুলিশ কমিশনার সাজিদ হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আবদুর রশিদ, আরএমপির মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস, বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার ফারজিনা ইয়াসমিন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারুণ চন্দ্র বর্মন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) বেলা পৌনে একটার দিকে রাজশাহী নগরীর অলকার মোড়ের কাছে ভিভো শোরুমের দুই জন কর্মচারী বেলা পৌনে একটার দিকে দুইটি ব্যাগে করে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে তারা সাজানো ছিনতাইয়ের শিকার হন। যেখানে ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাই হয় বলে তারা দাবি করে।

অভিযোগ পেয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ টাকাগুলো উদ্ধারে মাঠে নামে। ওইদিনই রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরীর উপকণ্ঠ কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৩২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি এক লাখ টাকা ছিনতাইয়ের সময় মোটরসাইকেল চালক আরিফুল ইসলাম ডলারের কাছে আছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত তিনজন।

চালক ডলার ও যে বাড়িতে টাকা পাওয়া গেছে সেই অহিদুল ইসলাম পলাতক আছে। এই টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরীর অলোকার মোড়ের হ্যালো রাজশাহী-২ মোবাইল ফোনের শো-রুমের প্রোপাইটর অঞ্জন কুমার রায় বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

আসামীরা মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিল। জব্দকৃত টাকার মালিক এই মামলার বাদি অঞ্জন কুমার রায় (৫২) ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার এসএম সালেহীন রিংকু (৪৫)। এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মূল পরিকল্পনাকারী ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকের চালক আরিফুল ইসলাম ওরফে ডলার (২৪) ও ভিভো শো-রুমের কর্মচারী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান ফয়সাল (২৬)। গ্রেফতারকৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে কথিত ছিনতাইয়ের সময় মোটরসাইকেল চালক আরিফুল ইসলাম ওরফে ডলার ও তার পরিবারের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই আরিফুল ইসলাম ওরফে ডলারের বাড়ি দামকুড়া থানাধীন হরিপুর এলাকায়। তার বাবা হাসান আলী ওরফে ‘হাসান ঘাটাল’ গত এক বছর আগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ক্রস ফায়ারে মারা যান। হাসান ঘাটাল এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।

এছাড়া তিনি ভারতীয় গরু ও অস্ত্র পাচারের সাথেও জড়িত ছিলেন। ক্রস ফায়ারের আগে হাসান ঘাটালের নামে রাজশাহী নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় ১৫টি মতো মামলা ছিলো। এই হাসান ঘাটালের ছেলে ডলাররের বিরুদ্ধেও এলাকায় মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ডলার নিজেও মাদকসেবী।

উল্লেখ্য, অলোকার মোড়ের ভিভো নামের একটি মোবাইল শো-রুম থেকে টাকা নিয়ে দুই কর্মচারী ডাচ বাংলা ব্যাংকে জমা দিতে যাওয়ার সময় কথিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় দু’জন কর্মচারী টাকা নিয়ে ব্যাগ কাঁধে করে পায়ে হেঁটে রাস্তার মাঝখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই আরোহী একজনের ডান কাঁধে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। ছিনতাইয়ের শিকার দুই কর্মচারী মোটরসাইকেল চালকদের পেছন পেছন ধাওয়া করেন। তবে তার আগেই তারা পালিয়ে যায়।

বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এতো বড় একটা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তবে ঘটনাটি নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল আমাদের। কারণ ঘটনাস্থল থেকে ব্যাংকের দূরুত্ব পায়ে হেঁটে গেলেও মাত্র এক মিনিট। সেই পথে দুই কর্মচারী টাকা নিয়ে ফুটপাথ ধরে না গিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে কেন গেলো-এটি নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এরপর দুই কর্মচারীকে আটক করে তাদের স্বীকারোক্তি মতে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়। সেসঙ্গে ৩২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ আরও জানান, ঘটনার সময়ের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় এতোগুলো টাকা নিয়ে চলে গেলেও প্রতিরোধের চেষ্টা করা হয়নি। তাছাড়া যারা টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন তারাও কোন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার ছাড়া খুব সহজেই মোটরসাইকেলে বসে টাকার ব্যাগ কাঁধ থেকে নিয়ে চলে যান। এ বিষয়টিই সন্দেহের সৃষ্টি করে। সেই সন্দেহই তাদের টাকা উদ্ধারে সফল করেছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ক্রাইম  রিপোর্টার শিবলী সরকার (নবু) রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.