বিরূপ সমালোচনা করলে আমাদের মনোবল ভেঙে যাবে : স্বাস্থ্যে ডিজি

ঢাকা প্রতিনিধি: করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করায় গণমাধ্যম এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ‘বিরূপ সমালোচনার’ কারণে স্বাস্থ্য কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে।
আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেন, কিছু কিছু পত্রপত্রিকা আমাদের এমন ভাবে সমালোচনা করছেন যেটা আমাদের মনোবলকে ভেঙে দিচ্ছে। আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করবেন, আমাদেরকে পথ দেখাবেন, আমরা আমাদের শুদ্ধ করবো। বিরূপ সমালোচনা করলে আমাদের মনোবল ভেঙে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে এসে শুরুতে দেয়া বক্তব্যের প্রায় পুরোটা জুড়ে সংবাদমাধ্যম এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রতি তীব্র ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসাকর্মীরা মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। তাদের অনেকই মানসিক বৈকল্যে ভুগছেন। সেজন্য চিকিৎসা সেবার সাথে সংশ্লিষ্টরা সমবেদনা আশা করতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয় যে, সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত বসুন্ধরা গ্রুপের হাসপাতাল ‘উধাও’ হয়ে গেছে, এবং এই খবরের জের ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এরই মধ্যে কড়া সমালোচনা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এ সংবাদে আপত্তি জানিয়ে ও ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতায় বড়সড় বিজ্ঞাপন ছেপেছে।
হাসপাতাল ‘উধাও’ সংক্রান্ত সমালোচনা প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, ‘উধাও’ শব্দটার মধ্যে অপমানজনক ব্যাখ্যা আছে। তিনি দাবি করেন, বাস্তবতা বিবেচনা করে সে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সেখানকার সরঞ্জামগুলো দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় প্রয়োজন অনুযায়ী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার যখন তৈরী করা হয়, যে পরিপ্রেক্ষিতে তৈরী করা হয়েছিলো, সেটি বিদ্যমান ছিলো না বিধায় সেখানে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি ছিলো, সারাদেশে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এবং বিভিন্ন জায়গায় আমরা সেটা ছড়িয়ে দিয়েছি। একটা টিস্যু বক্সের হিসাব পর্যন্ত আছে।
তিনি বলেন, বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারে প্রতিমাসে ৬০ লক্ষ টাকার বেশী খরচ হতো। এক হাজারের বেশী লোকবল সংশ্লিষ্ট ছিলো। কিন্তু প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জনের বেশী রোগী থাকতো না।
বাংলাদেশে কোভিড চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেভাবে সমালোচনা করছেন তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে মহাপরিচালক বলেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একদিনও রোগীর পাশে দাঁড়াননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিশেষজ্ঞরা যখন সরকারি দায়িত্বে ছিলেন তখন তারা কী করেছিলেন? তারা এখন টেলিভিশনে বসে টক-শোতে লম্বা-লম্বা কথা বলেন। আমাদের হাসপাতালে চলুন, হাসপাতালে রোগীর পাশে দাঁড়ান। সেটা না করে ঐ নিরাপদ বাক্সের মধ্যে বসে এই টেলিভিশন থেকে ঐ টেলিভিশনে গিয়ে নানান ধরণের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। টেলিভিশনের নিরাপদ বাক্সে না থেকে বেরিয়ে আসুন।
বিশেষজ্ঞদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য স্বাস্থ্য-কর্মীদের কাজ থেকে মন ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, এই সরকারেরই চাকরি করেছেন আপনারা। এই সরকারেরই সকল সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। আজকে আপনি রিটায়ারমেন্টে গেছেন, তার মানে এই না যে আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে গেছেন। আপনি এমন কথা বলতে পারেন না, যে কাজটা আপনি করতেন আগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেবার জন্য গত এক বছরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হলেও সেটির কোনো কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে না।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.