বাগমারায় অবৈধ পুকুর খনন, যত্রতত্র ট্রাক চলাচলে সড়কের বেহাল দশা


বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় অবৈধ ভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন থামছেই না। সম্প্রতি প্রভাবশালী একটি চক্র কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন। প্রভাবশালী ওই চক্রের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছেনা।
কৃষি জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে এবং চাষাবাদ হুমকীর মুখে পড়ছে। কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন না করার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া পুকুর খননের মাটি নিয়ে যত্রতত্র ট্রাক্টরযোগে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করায় সড়কের বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের সামনে দিয়ে অবৈধ জমিচাষের ট্রাক্টর মাটি বহন করলেও তারা যেন দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে। সবার এমন উদাসীনতায় সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তা বছর না পেরোতেই ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাগমারায় বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে পুকুর খনন চলছিল। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার মাহমুদু হাসান ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধের বেশ ভূমিকা পালন করেন। উপজেলা সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে রংপুর সদরে যান।
এ সুযোগে শুষ্ক মৌসুমে এখন পুকুর খননের হিড়িক পড়ে যাচ্ছে। পুকুর সিÐিকেট চক্রের হোতারা ভেকু (মাটিকাটা মেশিন) ভাড়া করে এনে পুকুর খননে আগ্রহী ব্যক্তিদের সাথে চুক্তি করা শুরু করছে। তারা উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও দলীয় কিছু নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে পুকুর খননে নেমে পড়েছে।
উপজেলার মাড়িয়া ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এরি মধ্যে পুকুর খনন শুরু হয়েছে। গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন কনোপাড়া ও ভবানীগঞ্জ-হামিরকুৎসা রাস্তার পাশে তিন ফসলী জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন।
স্থানীয়রা জানান, এসব অবৈধ পুকুর খননের মাটি নামমাত্র মূল্যে কিনে নিচ্ছে ভাটা মালিকরা। আর এসব মাটি ট্রাকে করে ভাটায় নিয়ে যাওয়ার ফলে ট্রাক থেকে মাটি পড়ে রাস্তা একাকার হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি গোয়াকান্দি এলাকার কনোপাড়ার খামার পাড়া এলাকার ৪০ বিঘার তিন ফসলি জমিতে দিনরাত পুকুর খনন করছে তাহেরপুর এলাকার জামগ্রামের সোহেল নামে এক আওয়ামীলীগ নেতা।
তিনি ক্ষমতার জোর ও এক পৌর মেয়রের দাপট দেখিয়ে ওই এলাকায় একের পর এক পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব মাটিও তিনি আশেপাশের ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সোহেলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি উল্টে এই প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
ভবানীগঞ্জ বাজারের একাধিক ভ্যানচালক ও পথচারী বিটিসি নিউজকে জানান, বুধবার সকাল থেকে উপজেলার প্রধান সড়ক বাজারের মধ্যে ডজনখানিক ট্রাক্টর মাটি নিয়ে চলাচল করে। যত্রতত্র ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তায় তীব্র যানজট ও অহরহ ঘটেছে দূর্ঘটনা। সড়কের উপর পড়ছে কাদামাটি। আর এসব ট্রাকের গতিও থাকছে বেপরোয়া। চরম আতংঙ্ক সৃষ্টি করে তারা রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
গত ২/৩ দিন ধরে ভবানীগঞ্জ বাজারে এমন বেপরোয়া ট্রাক্টরের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা জানান, এসব মাটি গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়ার খামারপাড়া অবৈধ পুকুর খননের মাটি। মাটি গুলো মাড়িয়া, দ্বীপপুর, বাসুপাড়া ও বাইগাছা এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এভাবে ট্রাক ভর্তি করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে ভবানীগঞ্জ- হামিরকুৎসা, ভবানীগঞ্জ-দ্বীপপুর ও ভবানীগঞ্জ-হাটগাঙ্গোপাড়া রাস্তায় ট্রাক্টর গুলো চলায় অন্যান্য যানবাহনের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ওভারলোড মাটির ট্রাক্টর চলাচল করায় এবং ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে এরি মধ্যে রাস্তার বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সিএনজি চালক রেজাউল করিম বিটিসি নিউজকে বলেন, যেভাবে মাটি ভর্তি ট্রাক্টর রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে সিএনজি নিয়ে চলাচলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত এসব ট্রাকের না কোন রোড পারমিট না আছে কোন বৈধ কাগজপত্র। তারা পুলিশ সহ পৌরসভার অবৈধ টোল আদায়কারীদের টাকা দিয়ে রাস্তায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, গত মিটিংয়ে আমি এই বিষয়ে তুলে ধরেছি। কোন ভাবেই যেন মাটি পরিবহনের ট্রাক্টররের কারণে রাস্তার ক্ষতি না হয় আমরা সে বিষয় লক্ষ্য রাখছি। থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, এভাবে ট্রাক্টর করে মাটি পরিবহনে সাধারণ পথচারীদের দূর্ভোগ বাড়ছে রাস্তারও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখবে।
এ বিষয়ে সদ্যই যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম বিটিসি নিউজকে জানান, উপজেলা সমন্ময় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া বিষয়টি আমলে নিয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.