‘প্রথম জয়ের’ সুঘ্রাণ পাচ্ছে বাংলাদেশ!

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: ১৩০ রানের লিড নেয়ার পর ৬৩ রানেই কিউয়িদের দুটি উইকেট তুলে নেয়ার পর বেশ কয়েকটি সুযোগই হাতছাড়া করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। যে সুযোগে ৭৩ রানের মূল্যবান জুটিসহ ফিফটি পেয়ে যান উইল ইয়াং। সেই আক্ষেপের মাঝেই গতির তোপ দেগে একাই ৪টি উইকেট তুলে নিয়েছেন ইবাদত হোসেন। যাতে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭ রানের লিড নেয়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের সুঘ্রাণই পাচ্ছে টিম বাংলাদেশ।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে আজ মঙ্গলবার (০৪ জানুয়ারি) চতুর্থ দিন সকালে ব্যাট করতে নামেন ইয়াসির আলী ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দিনের প্রথম উইকেট হিসেবে মিরাজকে শিকার করেন টিম সাউদি। ভেঙে যায় মিরাজ-ইয়াসিরের ৭৫ রানের জুটি। টম ব্লান্ডেলের তালুবন্দী হওয়ার আগে মিরাজ করেন ৪৭ রান। ৮৮ বল খেলা মিরাজের এই ইনিংসে ছিল ৮টি চারের মার। যাতে ৪৪৫ রানে ৭ম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
মিরাজ ফেরার পর আর বেশি দূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। ৮৫ বলে ২৬ রান করা ইয়াসিরকে শিকার করেন করেন কাইল জেমিসন। এরপর তাসকিন আহমেদ ৫ রান ও শরিফুল ইসলাম ৭ রানে দ্রুত আউট হলে শেষ হয় ৪৫৮ রান তোলা বাংলাদেশের ইনিংস। আর মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড।
তবে লাঞ্চের পর মাঠে ফিরেই কিউয়ি অধিনায়ক টম ল্যাথামকে বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ। ২৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় ব্ল্যাকক্যাপসরা। ল্যাথাম করেন ৩০ বলে ১৪ রান। এরপর প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে শিকার করেন ইবাদত হোসাইন। 
স্লিপে এক দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। তবে প্রথমে বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া না দিয়ে ‘নট আউট’ বলে দেন আম্পায়ার। আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা রিভিউ নিয়েই পেয়ে যান কনওয়ের উইকেটটি। ফলে ৪০ বলে ১৩ রান করে বিদায় নেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। আর ৬৩ রানে ২ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
এরপরই ব্ল্যাকক্যাপসদের আরও কয়েকটি উইকেট শিকার করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু সহজ ভুলে টেইলর ও ইয়াংকে হাত উজাড় করে সুযোগ দিয়েছেন টাইগাররা। সাদমানের হাত গলে পড়া সহজ ক্যাচ কিংবা ইবাদতের সহজ রান আউটের সুযোগ মিস, কেবলই আক্ষেপ বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশের।
অবশেষে শেষ বেলায় এসে ইয়াংকে শিকার করে নিজের কারিশমার সূচনা করেন ইবাদত। সরাসরি বোল্ড হন ইয়াং। এই ডানহাতি ব্যাটারের ব্যাট থেকে আসে ১৭২ বলে ৬৯ রান। সেইসাথে টেলরের সঙ্গে জুটি আসে ৭৩টি মূল্যবান রান। এক বল পরই হেনরি নিকোলসকেও বোল্ড করেন ইবাদত। যাতে একই ওভারে দুটি উইকেট পায় বাংলাদেশ।
আর এর মাধ্যমেই নিজের বিপক্ষে আসা সব সমালোচনারই যেন জবাবটা দিয়ে দেন দীর্ঘদেহী গতিময় এই পেসার। এখানেই ইবাদত গল্পের শেষ নয়! নিজের পরের ওভারেই টম ব্লান্ডেলকেও সাজঘরের পথ দেখান টাইগার এই পেসার। লেগ বিফোরের শিকার হন ব্লান্ডেল।
যদিও নির্ঘাত আউট জেনেও রিভিউ নেন ব্লান্ডেল। তবে বাঁচতে পারেননি। ইবাদতের অগ্নিঝরা টানা দুটি ওভারে ১৩৬ রানে ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। তবে এখনও ক্রিজে আছেন এই সিরিজ দিয়েই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে যাওয়া অভিজ্ঞ রস টেইলর।
যাতে মোমিনুলদের দাপট দেখানো আরও একটি দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৪৭ রান। টেইলর অপরাজিত আছেন ১০১ বলে ৩৭ রান নিয়ে। সঙ্গে ৩০ বলে ৬ রান নিয়ে আছেন রাচিন রবীন্দ্র। যাতে এখন পর্যন্ত ১৭ রানের লিড পেয়েছে স্বাগতিক দল।
আর এতেই দলটির মাটিতে প্রথমবারের মতো জয়ের সুঘ্রাণ পেতে শুরু করেছে টিম বাংলাদেশ। অবশ্য কাঙ্ক্ষিত জয় পেতে পঞ্চম দিন সকালে দ্রুতই কিউয়িদের লেজটা গুটিয়ে দিতে হবে টাইগারদের। অর্থাৎ তুলে নিতে হবে বাকি পাঁচটি উইকেট। তবে পঞ্চম দিনে কিউয়িদের দেয়া লক্ষ্যটা যদি বড় হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে হয়ত তা ছোঁয়াটা কঠিন হয়ে যেতে পারে মোমিনুলদের জন্য!
যাইহোক, এদিন তৃতীয় সেশনে ৭৯ রান সংগ্রহ করতে নিউজিল্যান্ড হারিয়েছে তিনটি উইকেট। আর তাঁদের হারানো পাঁচ উইকেটের মধ্যে ইবাদত হোসাইন একাই ৩৯ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন। বাকি উইকেটটি গেছে তাসকিনের ঝুলিতে।
এখন পর্যন্ত এটাই ইবাদতের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। নিঃসন্দেহে বুধবার এই ফিগারকে আরও সমৃদ্ধ করবেন টাইগার এই পেসার। আর সেটা হলেই রোমাঞ্চিত জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.