পুজোর আগেই পুজো

কলকাতা (ভারত) প্রতিনিধি: পুজো প্রতি বছর আসে আবার কালের নিয়মে ফিরেও আসে। চলতি বছরের স্মৃতিকে পুঁজি করে চলে আগামীর দিন গোনা। এর কোন ব্যতিক্রম নেই। নেই কোন ছন্দের পতন। তিন দিনের পুজোকে আমরা টানতে টানতে পাঁচ থেকে সাতে পর্যন্ত নিয়ে গেছি।
আবার কোথাও কোথাও মহালয়ার পরদিন প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে যায় মূল পুজো। এমনই এক পুজো শুরু হয়েছে বারাসাতে। প্রায় চারশত বছরের ইতিহাস প্রসিদ্ধ যোধাবাঈয়ের স্মৃতি ধন্য এই পুজো।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়,রাজা প্রতাপাদিত্যের প্রধান সচিব ও সেনাপতি ছিলেন শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি ও দাপটই ছিল আলাদা রকমের। অনেক চেষ্টা করেও শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের দাপটের কারণে প্রতাপাদিত্যেকে সম্রাট আকবর পরাজিত করতে পারেন নি। বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় রাজা প্রতাপাদিত্যে ও সেনাপতি শঙ্করকে দিল্লীতে বন্দি করে নিয়ে যান। মহালয়ার আগে পিতৃ তর্পন করার জন্য তিনি সম্রাট আকবরের কাছে অনুমতি চান।
এই খবর কোনভাবে যোধাবাঈয়ের কাছে পৌঁছোয়। তিনি শঙ্করের ধর্মাচরণের ব্যবস্থা করে দেন এবং নজর করেন ঘটনাটা সত্য কি না। তিনি তর্পনের সময় তাঁর পিছু নেয় এবং দেখেন সত্যিই তিনি তর্পনে মগ্ন।
তাঁর তর্পনের মন্ত্রোচ্চারণ শুনে অভিভূত হয়ে ও তাঁর মাতৃবন্দনার ভক্তি দেখে শীঘ্রই মুক্তির ব্যবস্থা করেন। সেই সময় থেকে শঙ্কর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এইবছরে এত বিড়ম্বনায় যোড়শপচারে মায়ের পুজো হয়তো করতে পারবনা কিন্তু অনুকূল সময় আসলে আমি জ্ঞানত পুজোর ত্রুটি রাখব না ধুমধাম করে মাতৃবন্দনা করব।
কথিত আছে যোধাবাঈ নিজে এই পুজোর অঞ্জলি প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু বিশেষ অসুস্থতার কারণে পেরে ওঠেন নি। কিন্তু দূত মারফত পুজোর নৈবেদ্য ও আনুষঙ্গিক পাঠিয়েছিলেন। শঙ্করের ইচ্ছেমতো যোধাবাঈয়ের নামে পুজোর সঙ্কল্প হতো।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দাবি, ১৬০৭ সাল নাগাদ এই পুজোর সূচনা হয়। প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে শঙ্কর এই পুজো নিজের পৈতৃক ভিটেতে শিব মন্দিরে শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই এই পুজোর নাম শিবের কোঠা দুর্গাপুজো।
রীতি অনুযায়ী জন্মাস্টমীতে কাঠামো পুজো হয়। ঠাকুর দালানেই তৈরি হয় প্রতিমা।
মহালয়ার দিন মণ্ডপে বসেন অসুরদলনী। পুজো আরম্ভ হয় প্রতিপদ থেকে।চলে চণ্ডিপাঠ ও পুজো। দশমীতে সূর্যাস্তের আগেই হয় মৃণ্ময়ী মূর্তির নিরঞ্জন। ঐ দিন সন্ধায় হয় সতনারায়ণ পুজো। আগে এখানে মহিষ বা পাঁঠা বলি হতো। ২০১০ সাল থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখনও সপ্তমীতে মায়ের মণ্ডপে হাঁড়িকাঠ বসাবার পর এলাকার বহু বিধবামহিলারা অন্ন গ্রহণ করেন না। নবমী দিন হাঁড়িকাঠ উঠলে অন্ন গ্রহণ করেন।
এই কদিন তাঁরা লুচি ও ফলাদি গ্রহণ করেন। এই পরিবারের সদস্য শ্রী মুকুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত এই পুজোর আমরা ষোড়শতম প্রজন্ম হিসেবে পুজো করছি। গতবছরের মতো এবারও করোনা বিধি মেনেই এই পুজো হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা (ভারত) প্রতিনিধি স্বপন দেব। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.