নিজ ছেলে-মেয়ে আর বহিরাগতদের নিয়ে লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার গঠন করে ফায়দা লুটছে উপদেষ্টা আমিনুল হক

নীলফামারী প্রতিনিধি: লায়ন ক্লাব অব বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার। যা মূলতঃ কিশোর ও যুব সংগঠন। এই সংগঠনের সৈয়দপুর শাখা হিসেবে গঠন করা হয় লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুর সিটি।

সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক সভাপতি আমিনুল হক নিজেকে উপদেষ্টা হিসেবে থেকে তার ছেলে নিকেন আরিফা হক কে ডিরেক্টর-১ এবং ছেলে নাশিদ আরিফুল হক কে ডিরেক্টর-২ করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করেছেন। এতে সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছিল মোস্তাফিজ আহমেদ রাজা নামে এক যুবককে। যার প্রেমিকা সুদূর ময়মনসিংহের মেয়ে শাহানাজ তারান্নুম আহমেদ পিংকি কে ডিরেক্টর-৩ করা হয়। যে কিনা সৈয়দপুরের বাসিন্দা নয়।

এভাবে নিজ পরিবারের সদস্য ও বহিরাগত ব্যক্তিদের নিয়ে লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুর সিটি গঠনের মাধ্যমে নানা কর্মকান্ড পরিচালনা করার নামে চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একারণে সভাপতি পদে থাকা মোস্তাফিজ আহমেদ রাজা দীর্ঘদিন থেকে লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুরের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ উত্তোলনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে উত্তরা ইপিজেড এ চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার লিও ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানার কাছ থেকেই একই কথা বলে অর্থ নেওয়া সহ তার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আইডিয়া এন্টারপ্রাইজে সংগঠনের কাজসহ নিজস্ব কাজ করে টাকা না দিয়ে তা আত্মসাত করেছে।

উত্তরা ইপিজেড এর বিভিন্ন কোম্পানীর কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও রাজা তার সাথে যৌথ ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয় এবং সে অনুযায়ী রোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ৩ শত টাকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তিনামা সম্পাদন করা হয়। এরপর থেকে রাজা ব্যবসা শুরু না করেই দোকানে অবস্থান করতে থাকেন এবং মাসুদ রানার নিকট থেকে বিভিন্ন খাতের জন্য টাকা নেন। এক পর্যায়ে দোকানের চাবি দাবি করায় রাজার চালাকি ধরতে পেরে নোটারী পাবলিকের চুক্তিনামা বাতিল করে।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজা দোকানে এসে মাসুদ রানাকে হুমকি প্রদান করে এবং হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত দিবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন এবং বিভিন্নভাবে হয়রানী করতে থাকেন। এমতাবস্থায় মাসুদ রানা বিগত ২০১৬ সালের ১২ মার্চ একটি লিখিত অভিযোগ দেয় সৈয়দপুর থানায় এবং এ সংক্রান্ত অভিযোগ লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুর এর উপদেষ্টাকেও জানানো হয়। কিন্তু তারপরও ক্লাব কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন সুরাহা করেননি বরং রাজাকেই সভাপতি হিসেবে রেখে সংগঠন পরিচালনা করতে থাকে। এতে বাধ্য হয়ে অনেক সদস্যই পরবর্তীতে লিও ক্লাব ত্যাগ করেন এবং এখন পর্যন্ত সে টাকা পাননি।

এ ব্যাপারে মেসার্স আইডিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে জানান, লিও ক্লাব প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই নানা অনিয়ম করা হচ্ছে। তারপরও আমরা সৈয়দপুরে একটা ভালো সংগঠন গড়ে উঠুক এ আশাতে থেকে যাই। কিন্তু দিন দিন রাজা ও আমিনুল সাংবাদিকের ছেলে-মেয়ের আধিপত্য অবৈধভাবে বেড়ে যায়। এতে বিরোধিতা করলেই অন্য সদস্যদের বের করে দেওয়ার হুমকি দিলেও অর্থ আত্মসাৎকারী ও নানা অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র সানফ্লাওয়ার স্কুলের সাবেক সভাপতি আমিনুল হক এ সংগঠনে থাকায় অপকর্মকারীরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

মাসুদ রানা আরও বিটিসি নিউজকে বলেন, এই আমিনুল হকই রাজাকে লেলিয়ে দিয়ে আমার কাছ থেকে লিও ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারী করার জন্য সদস্য অন্তর্ভুক্তি বাবদ ২০ হাজার টাকা এবং কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা আজও আমি পাইনি। তাদের প্রতারণা ও হুমকি হয়রানীর কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। আমিনুল হককে অভিযোগ দিয়েও কোন বিচার পাইনি। আমি এ ব্যাপারে লিও ক্লাব বা লায়ন্স ক্লাবের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত পূর্বক সঠিক বিচার দাবি করছি এবং অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।

উল্লেখ্য: মাসুদ রানা অভিযোগের সাথে টাকা প্রাপ্তির প্রমাণ স্বরুপ তার আইডিয়া প্রিন্টার্স এন্ড স্টেশনারী প্রতিষ্ঠানের প্যাডে যে তালিকা দিয়েছেন তাতে উল্লেখিত খাত সমুহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুর সিটি এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অন্তর্ভূক্তি ফি ২০ হাজার এবং বিগত ৭/১১/২০১৫ ইং তারিখে লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুর সিটি এর অডিট টিমের জন্য পতিতা বুকিং বাবদ নগদ ২০ হাজার টাকার বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে মাসুদ রানা জানান, যা সত্য আমি তাই উল্লেখ করেছি। রাজা আমার কাছে এ কথা বলেই টাকা নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুরের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বিটিসি নিউজকে বলেন, সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজকে লায়ন্স ক্লাবে অন্তর্ভূক্তি করে সেখানকার সভাপতি আমিনুল হক অনিয়ম দূর্নীতি করে চলেছেন।

পাশাপাশি লায়ন্স ক্লাব আন্তর্জাতিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা আত্মসাত করছেন এবং দিনের পর দিন সংগঠনের দূর্নাম ছড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন লিও ক্লাব অব সানফ্লাওয়ার সৈয়দপুর সিটির বহিরাগত দিয়ে তৈরী কমিটি সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এধরণের অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িতদের তিনি বিচার দাবি করেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নীলফামারী প্রতিনিধি এম কে আনোয়ার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.