নাটোরে গরুর হাটে দাম মেলেনি পশুর, মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি


নাটোর প্রতিনিধি: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নাটোরে শুরু হয়েছে জমজমাট পশুর হাট। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক কোরবানির পশুর হাট লাগানোর কথা থাকলেও নাটোরের সিংড়ার গরু-ছাগলের হাটে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এতে সাধারণ পশু ক্রেতাদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তবে করোনার কারণেই নাটোরের হাটগুলোতে এবার গরুর আমদানি বেশি থাকলেও ক্রেতা কম। ফলে তুলনামূলক কমদামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানি পশু। দামের সুবিধা পাওয়ায় গরু কিনে ক্রেতারা খুশি হলেও সারাবছর পালন করে প্রত্যাশার সমান বিক্রয়মূল্য না পাওয়ায় মন খারাপ বিক্রেতাদের।
নাটোর জেলার ৭টি উপজেলায় অনুমোদিত মোট ১৩টি কোরবানি পশুর হাট রয়েছে। হাটগুলোর মধ্যে নাটোর সদরের তেবাড়িয়া, নলডাঙ্গার পৌরসভার হাট, সিংড়ার পৌরসভার হাট, বড়াইগ্রামের মৌখড়া এবং গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় হাট অন্যতম।ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক এই হাটগুলো।
এবছর জেলায় তিন লক্ষাধিক কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও হাট চলছে। চলছে পশু ক্রয় বিক্রয়।
প্রতিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা ও বিক্রেতায় মিলে জম জমাট হাট বসেছে। হাটে কোন তিল ঠাঁই জায়গা নেই। স্বাস্থ্যবিধি বা সামজিক দূরত্বের কোন বালাই নেই। নেই কোন করোনা প্রতিরোধে সুরক্ষা সামগ্রী। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসানোর কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
জেলার বৃহত্তম সদর উপজেলার তেবাড়িয়ায় সাপ্তাহিক হাট বসে। গত রোববার এ হাটে খামারীরা প্রচুর গরু নিয়ে আসেনে হাটে। তবে অন্য বছরের চেয়ে অনেক কম দামে গরু বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ন্যায্য দাম না পেয়ে অনেক খামারী গরু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এছাড়া যারা গরু বিক্রি করেছেন তারা প্রতিটি গরুতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসান গুণছেন। হাটে ঘরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম গড়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কম। এতে ক্রেতাদের খুশি হতে দেখা গেলেও বিক্রেতারা খুশি হতে পারছেন না।
সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া গ্রামের এলাকার কৃষক জনাব আলী বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি তার একটি ষাঁড় ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে তার আশা ছিল ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করার। হলো না।কোরবানীর গরু বিক্রয় নিয়ে খামারীরা আছেন শঙ্কায় আর দুঃশ্চিন্তায় ক্রেতারা।
চলমান লকডাউনের কারণেই এই শঙ্কা ও দুঃশ্চিন্তা।খামারীরা জানান, প্রতিবছর ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে থেকেই ঢাকার ব্যাবসায়ীরা খামার ও গরু মালিকের বাড়ি বাড়ি এসে দাম দর করে গরু কিনেন। এবছর সেই কেনা বেচা নাই।
প্রতি বছর কোরবানির হাটে তোলার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা গরু কিনতে তার খামারে ভিড় করলেও এবার পরিবেশ একেবারেই ভিন্ন। ঢাকার কোন ব্যবসায়ীরাই এখন পর্যন্ত আসে নাই। তাছাড়া অনেকে ঢাকাসহ বড় বড় কুরবানির হাটে গরু নিয়ে যান, কিন্তু এবার সে সুযোগ নাই।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১২ হাজার ১৫০টি পশুর খামার রয়েছে।
এবার জেলার সবচেয়ে বৈচিত্রময় ও আকর্ষণীয় গরুর খামার করেছেন সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকার চাল ব্যবসায়ী আলহাজ রেকাত আলী। এই খামারের ১৬৩ টা গরুর মধ্যে বেশিরভাগ বিদেশী জাতের। এরমধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান ও উলুবাড়িয়া জাতের গরু,ব্রাহামা, ভুটানি সহ নানা জাতের। লাল, সাদা, কালো রঙের এসব এক একটি গরু লম্বায় ৯ ফুট ও উচ্চতায় ৬ ফুটেরও বেশি হয়েছে। বিগত সময়ে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীকে এসব গরু দেখার কৌতুহল নিয়ে খামারটি পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। এখনো বিক্রি হলো না গরু।ঈদের আর ৫ দিন বাঁকি এ পর্যন্ত তিনি মাত্র ৫ টি গরু বিক্রি করেছেন।
ছাতনী গ্রামের আনছার আলী বলেন, আমার দুটি দেশী জাতের গরু আছে। বাড়িতে এসে স্থানীয় কয়েকজন দাম দর করে গেছেন। কিন্তু তারা যে দাম বলেছেন, বাজার মূল্যের অর্ধেক।
তেবাড়িয়া গ্রামের মুক্তার হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রতিবছর আমরা স্থানীয়ভাবে কোরবানীর পশুর হাটে গরু নিয়ে যাই এবং সেখানে দাম দর যাচাই বাছাই করি। এরপর বাজার বুঝে বিক্রয় করি। এবছর গরু বিক্রি করে আমরা খরচের টাকা তুলতে পারবো কি না সন্দেহ আছে।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বিটিসি নিউজকে জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ইতোমধ্যে নাটোর পশুর হাট ও অনলাইন ডিজিটাল পশুর হাটসহ ৯টি অনলাইন প্লাটফর্ম তাদের কাজ শুরু করেছে। আরও কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য গড়ে উঠেছে অসংখ্য অনলাইন প্লাটফর্ম। যেগুলো থেকে ক্রেতা সহজেই পশু পছন্দ করে কিনতে পারবেন।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বিটিসি নিউজকে বলেন , এ বছর পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসানোর জন্য ইজারাদারদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। এছাড়া হাটগুলোতে ভাম্যমান আদালতের একাধিক টিম কাজ করছে। তাছাড়া সেনাবাহিনী, পুলিশ ,বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের নজরদারী রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.