নাটোরের নলডাঙ্গায় ফসল তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রাস্তার দখল নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা; ৯ গ্রামের যোগাযোগে বিঘ্ন!

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গায় উপজেলায় রাস্তার জায়গা দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। অভিযোগ উঠেছে, সিংড়া উপজেলার দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদীর তীরবর্তী প্রত্যন্ত খাজুরা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বামনগ্রাম এলাকায় মানুষের চলাচল ও ফসল পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি গায়ের জোরে দখল করে মাটি ফেলে বন্ধ করেছেন নব্য আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ স¤পাদক শহিদুল ইসলাম ও তার পরিবার। দুই সপ্তাহ আগে শহীদুল তার লোকজনদের সাথে নিয়ে রাস্তা দখল করে। সম্প্রতি, মাটি ফেলে ওই রাস্তা উঁচু করায় মানুষ ও যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে করে পাশ্ববর্তী বিলের ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে
কৃষকরা। তাদের মতে, রাস্তাটি বন্ধ থাকলে উৎপাদিত ধান ও অনান্য শস্য পরিবহনে মণপ্রতি ব্যায় বাড়বে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচ না উঠার শঙ্কায় রয়েছেন তারা।এমন অবস্থায় ৩নং খাজুরা ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে অভিযুক্ত শহিদুলকে বিবাদী করে তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে রাস্তাটি দখলমুক্ত করার জন্য। অপর দুজন হলেন শহিদুলের ছোটভাই সাইফুল ইসলাম ভোলা ও জুড়ান মিস্ত্রি।বৃহ®পতিবার সরেজমিন বামনগ্রাম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বামনগ্রাম মৌজার বামনগ্রাম জামে মসজিদের পশ্চিম দিক হতে দক্ষিণে দবিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা দখল করে মাটি ফেলে চলাচলের পথ বন্ধ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী জানায়, সপ্তাহদুয়েক আগে শহিদুল তার ভাইদের নিয়ে এসে চর দখলের মতো রাস্তাটি দখল করে।

ফলে বামুনগ্রামসহ মোহনপুর, গোয়াটঘাট, করেরগ্রাম, পরকোল, পারবিশা, মদনভাঙ্গা ও চানপুরের আন্ত:যোগাযোগ ও চলাচল বন্ধ হবার উপক্রম।বৃহ®পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে গ্রামবাসী ছুটে আসেন।বামুনগ্রামের গ্রামপ্রধান আব্দুল ওয়াহেদ, বর্ষীয়ান কৃষক আব্দুল জব্বার ও গ্রাম পুলিশ জসিম উদ্দীন অভিযোগ করেন, সপ্তাহদুয়েক আগে ভাইদের নিয়ে শহিদুল এসে রাস্তাটির জায়গা নিজেদের বলে দাবী করে। এরপর তারা মাটি দিয়ে ভরাট করে ওই রাস্তা। ভয়ে গ্রামের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।পাশ্ববর্তী গোয়ালঘাট গ্রামের আজিজার রহমান বলেন, রাস্তাটি দখল করায় চলাচল নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগে রাস্তাটি দিয়ে সাইকেল, ভ্যান, ছোট ট্রাক্টার চললেও দখলের পর একটা সাইকেল পর্যন্ত চলাচলের জায়গা নেই।

সরকারী দলের নেতা বলে কেউ শহিদুলদের সাথে পেরে উঠছে না।স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ সুলতান ২০ বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছেন। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাবার মতো অবস্থা রাখেনি শহিদুলরা। এ অবস্থায় রাস্তাটি বন্ধ থাকলে শুধু ধান কেটে বাড়ি পর্যন্ত নেয়ার বর্ধিত ভাড়াই উৎপাদন খরচের কাছাকাছি চলে যাবে।একই অভিযোগ করেছেন আরেক কৃষক সুনীল কুমার পাল।শুধু চলাচলের রাস্তাই নয়, রাস্তাটির পাশ্বর্তী কয়েকটি ঘরের জায়গাও নিজেদের বলে দাবী করেছে শহিদুলরা। বাপ্পী হোসেন নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, শহিদুলরা নিজস্ব আমিন এনে মাপজোক করে তার বাড়ির সীমানার বৈধ ১৮ ফিট জায়গা নিজেদের বলে দাবী করছেন। তারা অন্যায়ভাবে ঘর ভাঙ্গার পায়তারা করছে।

এছাড়াও আত্রাই নদী তীরবর্তী বামুনগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি রাস্তার মাত্র ১০০ ফিটের কাজ শহিদুল ও তার পরিবারের স্বেচ্ছাচারিতা ও অন্যায্য দাবীর কারণে বন্ধ হয়ে রয়েছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শহিদুলরা দলে অনুপ্রবেশকারী। সম্প্রতি বিএনপি থেকে তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা বিভিন্ন অপকর্ম করে চলেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তারা প্রকৃতপক্ষে দলের ভোট নষ্ট করার কাজেই নিয়োজিত।এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত শহিদুল ও তার ভাই সাইদুলকে এলাকায় পাওয়া যায়নি।

তাদের পক্ষে তাদের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম কথা বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে। তিনি ভুক্তভোগিদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তারাই দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার জায়গা দখল করে বাড়িঘর তুলে বসবাস করে আসছে। তারা নিজেদের দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দিলেই চলাচলের রাস্তাহয়ে যাবে। তার পরিবার নিজেদের মালিকানাধীন জায়গাতেই মাটি ফেলেছেন মাত্র।এ ব্যাপারে ৩নং খাজুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান গ্রাম আদালতে মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, শহিদুল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসী আমাকে জানালে স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল রাস্তায় কোনরুপ প্রতিবন্ধকতা না সৃষ্টি করতে তাদের নির্দেশ দেন। তবে শহিদুলরা তাতে কর্ণপাত করেনি।নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রেজা হাসান বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। রাস্তা দখল করে চলাচল বিঘিœতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.