নওগাঁয় জমি অধিগ্রহনের নামে হরিলুট

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় ‘বিদ্যুতিক উপকেন্দ্র’ স্থাপনে জমি অধিগ্রহনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ১০ লাখ টাকা মূল্যের জমি সর্বসার্কুল্যে ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৩৬ টাকায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অপরদিকে জমির মূল মালিককে বাদ দিয়ে ভূয়া দলিলের মালিকের কাছ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ করায় চেক হস্তান্তরের সময় জটিলায় চেকটি আটকে আছে। কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে সরকারী টাকা নয়-ছয় করে আত্মসাতের পরিকল্পনা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের দাবী, বিষয়টি তদন্তপূবর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জমির মূল মালিকের কাছ থেকে অধিগ্রহণ এবং সরকারি টাকা আত্মসাত না করে অধিগ্রহন নীতিমালার আলোকে জমিটি সরকারীভাবে গ্রহন করা হোক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পত্নীতলা উপজেলার মধইল মৌজায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ‘নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২’ থেকে ‘বিদ্যুতিক উপকেন্দ্র’ স্থাপনে দশমিক ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকৃত জমির প্রকৃত মালিক দাবীদার মধইল গ্রামের আব্দুল আজিজ সরদারের ছেলে বাকপ্রতিবন্ধি নূর আলম, মুনছুর রহমান চৌধূরীর ছেলে নূরুল ইসলাম মন্টু ও জাহিদুল ইসলাম এবং আক্কাস আলীর স্ত্রী তহমিনা বেগম।

তবে মধইল দিঘীপাড়া গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে আল-মামুন গোলাপ ও হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ফজলু সরকার ওই জমির জাল দলিল করে জমির প্রকৃত মালিক সেজে নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ করে। জমি অধিগ্রহনের পর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে আল-মামুনের নামে ৬৫ লাখ ৫৩ হাজার ৭০৫ টাকা এবং ফজলু সরকারের নামে ৩৯ লাখ ৩২ হাজার ২২৩ টাকার চেক ইস্যু করা হয়েছে।

জমির প্রকৃত মালিকরা বিষয়টি বুঝতে পেরে অধিগ্রহনকৃত জমির ক্ষতিপুরনের টাকার চেক বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর ১৩/১২/২০১৮ ইং তারিখ এবং ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের সার্ভেয়ার শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে ১৫/০১/২০১৯ ইং তারিখে একটি অভিযোগ করে।

সরেজমিনে জানা গেছে, মধইল বাজার থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার পশ্চিমে পত্নীতলা-সাপাহার সড়ক থেকে প্রায় ৩০ ফুট দূরে অধিগ্রহনকৃত জমিটি। জমিতে ‘বিদ্যুতিক উপকেন্দ্র’ স্থাপনের একটি সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। এ মাঠের জমিতে বছরে দুইটি ফসল হয়ে থাকে। এর মধ্যে গভীর নলকুপের পানি থেকে বোরো আবাদ এবং আরেকটি ফসল বন্যার পানিতে ডুবে যায়। এ মাঠের জমির মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ গত তিনবছর আগে বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যে পার্শ্ববর্তী জমি বিক্রি হয়েছে। সরকার যদি বর্তমানে কৃষকদের কাছ থেকে জমি কিনতে চায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা মূল্য দিলে তারা বিক্রি করে দিবেন। দশমিক ৪০ একর যে জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার বর্তমান বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা হতে পারে। সেখানে জমিটি ১ কোটি ১৪ লাখ টাকায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

মধইল গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ শাহজাহান আলী বলেন, একটি চক্র এ এলাকায় কাজ করে। যারা দালালি, অপকর্ম ও দাঙ্গাহাঙ্গা এবং মামলাবাজ। আর এ চক্রটি ভুল বুঝিয়ে জমির কোটি টাকা মূল্য করেছে। তারা সরকারকে ঠকিয়ে টাকা আত্মসাতের পায়তারা করেছে। প্রত্যেক এলাকার জমির একটি নির্দিষ্ট দাম আছে। সুষ্ঠু তদন্তপূবর্ক জমির প্রকৃত মালিককেই যেন টাকা দেয়া হয় এবং জমির ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সেই সাথে এ অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

একই গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, সোহেল রানা ও মুঞ্জু হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, এ মাঠের জমিতে দুইটা ফসল হয়। তার মধ্যে একটি ফসল বন্যার সময় ডুবে যায়। এই জমি যে দামে অধিগ্রহন করা হয়েছে তা অসম্ভব। যে জমিটা অধিগ্রহন করা হয়েছে সে জমির আইলের পাশেই গত তিন বছর আগে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে বেলাল নামে এক ব্যক্তি ১০ কাঠা জমি কিনেছেন। এ মাঠের জমি উর্ধ্বে গেলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বিঘা বিক্রি হবে। সেখানে কোটি টাকায় কিভাবে বিক্রি হয়। নিশ্চয় কোন একটা চক্র এর সাথে জড়িত। যারা সরকারের সাথে প্রতারনা করে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন।

জমির মালিক নূরুল ইসলাম মন্টু বিটিসি নিউজকে বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিটি দীর্ঘদিন থেকে ভোগদখল করে আসছি। একটি মহল চক্রান্ত করে আমাদের জমির ভূয়া দলিল করে জমির প্রকৃত মালিক সেজে সরকারের কাছে লিখে দিয়েছে। আমরা জমির প্রকৃত মালিক এবং সরকারকে জমি দিতে প্রস্তুত। ভূয়া দলিল ও ভূয়া মালিক সেজে কিভাবে সরকারের কাছে জমি দিতে পারে, তা বোধগম্য আসেনা। এছাড়া জমির মূল্যও বেশি ধরা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

অধিগ্রহনের চেক ইস্যুকৃত জমির মালিক আল-মামুন গোলাপ বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার নামে একটি চেক ইস্যু করা হয়েছে। একটি অভিযোগের ভিত্তিত্বে চেকটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আটকে আছে। এ বিষয়ে আমি আর কোন কথা বলতে পারবো না। কথা বলা নিষেধ আছে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরা বিটিসি নিউজকে বলেন, জমির মূল্য নিয়ে কোন সমস্যা নাই। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা থাকায় তদন্ত চলছে। এরপর জমির প্রকৃত মালিকের কাছে চেকটি হস্তান্তর করা হবে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: তোহিজ্জুল ইসলাম বলেন, ভূমি অধিগ্রহনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহন শাখার। সেখান থেকে জমির মূল্য নির্ধারন করা হলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে টাকা পরিশোধ করা হয়। আমরা শুধু জমি পছন্দ করে দিয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নওগাঁ প্রতিনিধি মো: আব্বাস আলী।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.