দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের জামিন বাতিলের দাবীতে মানববন্ধন


হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: যন্ত্রপাতি ও বই কেনার প্রকল্পে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ানসহ অন্যান্য অভিযুক্তদের জামিন বাতিল করে গ্রেফতার এবং ক্রয় কমিটির সদস্যদের মামলায় সম্পৃক্ত করার দাবিতে হবিগঞ্জে মানব বন্ধন পালিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন হবিগঞ্জ। এতে বিভিন্ন পেশার নাগরিকগণ অংশ নেন।

সংগঠনটির সমন্বয়ক পীযুষ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দুর্নীতির ক্ষেত্রে আলোচিত এই মামলাটি নিয়ে দুদক নাটক শুরু করেছে। দুদকের দায়ের করা ২টি মামলায়ই ক্রয় কমিটির সদস্যদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অধ্যক্ষ ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। ফলে দুদক নিজেই মামলাটিতে হেরে যাওয়ার পথ সৃষ্টি করেছে।

তারা বলেন আলোচিত মামলায় যেখানে অধ্যক্ষ সুফিয়ান সাময়িক বরখাস্ত এবং ক্রয় কমিটি সংশ্লিষ্টরা কারাগারে থাকার কথা, সেখানে অভিযুক্তরা একের পর এক জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। এতে জেলাবাসী বুঝতে বুঝতে বাকী নেই যে দুর্নীতিবাজদের হাত অনেক লম্বা। অবিলম্বে ক্রয় কমিটির সদস্যদেরকে মামলায় সম্পৃক্ত করে পুনরায় মামলা দায়ের করার আহবান জানান বক্তারা।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট দুদকের হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে পৃথকভাবে মামলা দুটি দায়ের করে। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান এবং দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান এবং উপসহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান বাদী হয়ে দুটি আলাদা মামলা করেছেন।

এর মধ্যে বাদি উপ-সহকারী পরিচালক সহিদুর রহমানের দায়ের করা মামলায় বই কিনতে ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ১২১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আফসানা ইসলাম কাকলীকে।

অন্যদিকে উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমানের করা মামলায় বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে যন্ত্রপাতি কেনার মাধ্যমে ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী এসএম নজরুল ইসলামকে।

হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু করে দুদক। দুদক উপ-পরিচালক মো. শামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে গত ২১ অক্টোবর শেখ হাসিনা মেডিকের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ আবু সুফিয়ান, ঠিকাদার নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আফসানা ইসলাম কাকলী হবিগঞ্জের সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে হাজির হলে বিচারক আমজাদ হোসেন তাদেরকে জামিন দেন। এর আগে একই আদালত থেকে গত ১৪ অক্টোবর পুনম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম জামিন পান।

মানব বন্ধনে সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন কমিটির হবিগঞ্জের সমন্বয়কারী পীযুষ চক্রবর্তী বলেন, ‘সরকারি অর্থে পণ্য কেনাকাটায় কমিটি গঠন করা হয়। শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের দরপত্র কমিটিও ছিল। সে ক্ষেত্রে ক্রয় কমিটির অন্যান্য সদস্যকে বাদ দিয়ে দুদক যে মামলা করেছে তা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছু নয়।

মূল অপরাধীদের রক্ষায় মামলার নামে দুদকের ভাঁওতাবাজি বন্ধ না করলে প্রয়োজনে হবিগঞ্জবাসী আন্দোলনে নামবে।মানববন্ধনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক ও বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সংক্ষুব্দ নাগরিক কমিটির সমন্বয়কারি ও বাপার সাধারন সম্পদক তোফাজ্জল সোহেল, খোয়াই থিয়েটারের সাধারন সম্পাদক ইয়াসিন খান, বাসদ নেতা শফিকুল ইসলাম, এডভোকেট জুনায়েদ আহমদ, এডভোকেট রনধীর দাশ প্রমুখ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হবিগঞ্জ প্রতিনিধি মোঃ জুনাইদ চৌধুরী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.