তীব্র সংকটে হাবিপ্রবির বিজ্ঞান অনুষদ 

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব সংকটসহ নানামুখী সংকটের মুখে পরেছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা। ২০১৫ সালে স্নাতক পর্যায়ে ( পরিসংখ্যান, রসায়ন, গনিত ও পদার্থ বিভাগ) শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পরে আনুপাতিক হারে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি হয়নি হাবিপ্রবির বিজ্ঞান অনুষদের।বিজ্ঞান অনুষদ খোলার সময়ও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা ছিলো না বলে জানা গেছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, ” আমরা শ্রেণিকক্ষ নিয়ে তীব্র সংকটে পরেছি । পাঁচটি ব্যাচের জন্য মাত্র ১ টি শ্রেণিকক্ষ ।পক্ষান্তরে ,দুইটি ল্যাব রুম থাকলেও একটি ল্যাবের যন্ত্রাংশ গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে চুরি হয়। কিন্তু ল্যাবের কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ মেরামত করার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা অন্যান্য অনুষদের অধীনে প্রায় ১৪ টি বিভাগের শিক্ষার্থীর ক্লাস নিয়ে থাকেন যদিও বর্তমানে পরিসংখ্যান বিভাগে মাত্র ৯ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। আবার এর মধ্যে দুইজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে বাহিরের দেশে অবস্থান করছে “। এ সময় তিনি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ” শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দুইটি শ্রেনিকক্ষ, দুইটি ল্যাবরুম সহ অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অতি দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন”।
এদিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ মমিনুল ইসলাম তাঁর বিভাগের সংকট নিয়ে বলেন, ” শ্রেণিকক্ষের সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে ক্লাশ করতে পারছে না। এছাড়া ৭ জন শিক্ষক দিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচটি ব্যাচ সহ বিভিন্ন অনুষদের ১০ টি বিভাগের ( ননমেজর বিষয় ) ক্লাস কার্যক্রম করা সঠিক ভাবে সম্ভব হচ্ছে না “। এসময় তিনি শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, এমএস ‘র ব্যাচ ভর্তি হলে এই সংকট আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হবে “।
আপরদিকে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ মামুনুর রশিদ তাঁর বিভাগের সংকট নিয়ে বলেন, ” প্রতি সেমিস্টারে প্রায় ৫০ টির বেশি কোর্স নিতে হয় মাত্র ৬ জন শিক্ষককে । অতি দ্রুত এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে পাশাপাশি ক্লাশ রুমের ( পাঁচটি ব্যাচের জন্যে একটি শ্রেণি কক্ষ রয়েছে ) সংকট নিরসন করতে হবে এছাড়া এই বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে “।
অন্যদিকে রসায়ন বিভাগের সংকট নিয়ে উক্ত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শামসুজ্জোহা বলেন, ” শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে আমরা নির্ধারিত সময়ের মাঝে এক সেমিস্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিনা। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জটে পরে যাচ্ছে।তাই সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ অতিদ্রুত না নিলে এ বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভবকর হবে না আগামীতে ” ।
আবার বিজ্ঞান অনুষদের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা মিঠু বলেন, ” বিজ্ঞান অনুষদের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি দেয়া দরকার। প্রায় সময় শুনছি ১৭,১৮ কিংবা ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ সংকটের জন্যে ক্লাস করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঘুরে চলে যাচ্ছে। যা সত্যিই অনেক দুঃখজনক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে বিজ্ঞান অনুষদের উপর বার্তি নজর দেয়া উচিত কারণ আমাদের অনুষদের শিক্ষকদের অন্য অনুষদের তুলনায় অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। তাই আমি যথাযত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো যাতে ক্লাস রুম, ল্যাব ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অতি দ্রুত শেষ করা হয় “।
সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান,” আমরাও বুঝতেছি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু চাইলেও তো একেবারে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না।সংকট যাতে না থাকে সেজন্য দশ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ অতিদ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আশা করি, নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ হয়ে গেলে তখন আর ক্লাস ও ল্যাবের সংকট হবে না । শিক্ষক নিয়োগের জন্য আমরা একটি চাহিদা পত্র দিয়েছি ইউজিসিতে। অনুমোদন পেলে আমরা নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করবো।এই সময়টুকু সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে “।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিজ্ঞান অনুষদে প্রতিটি বিভাগের একটি করে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এছাড়া শিক্ষক সংকট থাকায় প্রায় প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকরা সময় মতো ক্লাস নিতে পারছে না। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তীব্র সেশনজটের সম্মুখীন হচ্ছে ।

 সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মোঃ মিরাজুল আল মিশকাত।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.