চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ইউএনও’র নামে প্রতারণা করে চাঁদাবাজী গ্রাম পুলিশ রকি’র

         (৪ লাখ জরিমানা ও ২০ বছর জেলের হুমকী ॥ সপ্তাহ পার হলেও হয়নি কোন ব্যবস্থা)

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নামে প্রতারণা করে বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মো. আওয়াল হোসেন রকির বিরুদ্ধে।

বেশ কিছুদিন থেকেই ঝিলিম ইউনিয়নের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান, রেষ্টুরেন্ট, বেকারী ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইউএনও’র নামে চাঁদাবাজী করে আসছে রকি।

বিষয়টি গত শুক্রবার জানাজানি হলে সরজমিন গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। তবে গ্রাম পুলিশ রকি বিষয়টি না বুঝে ভুল হয়েছে বলেও স্বীকার করেছে প্রতিবেদকের কাছে।

চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে বন্ধ রাখারও চেষ্টা করে গ্রাম পুলিশ রকি। বিষয়টি জানাজানি হলেও প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসের পক্ষ থেকে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ঘটনার বিষয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সম্প্রতি যোগদান করা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল সরকার।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদে ঝিলিম বাজারের প্রবাসী মো. গোলাম মর্তুজার ছেলে মো. আওয়াল হোসেন রকি কে গ্রাম পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় প্রায় বছর খানেক আগে। গ্রাম পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই রকি বিভিন্নভাবে মানুষের উপর অত্যাচার ও চাঁদাবাজী শুরু করে।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরের অফিসারের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে রামরাজত্ব চালিয়ে আসছে সে। বিভিন্ন সময় পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়েও টাকা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে এই গ্রাম পুলিশ রকির বিরুদ্ধে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ জুন/২০ ঝিলিম বাজারের শিমুলতলা মোড়স্থ নিশান মিষ্টান্ন ভান্ডারের কাছ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত ঠেকানোর নামে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের জন্য টাকা লাগবে মর্মে ২০ হাজার টাকা আদায় করে।

এঘটনায় ওই দিনই সন্ধ্যায় সদর মডেল থানায় নিশান মিস্টান্ন ভান্ডারের মালিক শ্রী ভূষোণ সাহা একটি জিডি করেছেন। যে বিকাশ নম্বারের টাকা দেয়া হয়েছে সেটা হলো-০১৯১০৫৪১৯৩৯। এই নম্বর থেকেই ইউএনও’র নামে চাঁদা নেয়ার বিষয়ে নম্বরের মালিক সজল নামের একজন, তাঁর বাড়ি বরিশাল বলে জানায় এবং এসকল বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি বলেও জানানো হয়।

তবে ঘটনার প্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সব কিছু জেনেও না জানার ভান করছেন। এছাড়া একই নম্বর থেকে ঝিলিম বাজরের নুরতাজ হোটেল ও সালমা বেকারী এর কাছেও ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করে এবং বিএসটিআই, ভ্রাম্যমান আদলতের নামে টাকা না দিলে আরও কঠোর শাস্তি ও জরিমানার হুমকি দিতে থাকে। শেষে এঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে বিষয়গুলি নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করে রকি।

সালমা বেকারীর মালিক মো. গুমানী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, গত ২৬ জুন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মো. আওয়াল হোসেন রকি, তার নিজ মোবাইল থেকে ইউএনও সাহেব কথা বলবে বলে ফোন ধরিয়ে দেয়।

রকির মোবাইল থেকে বেকারীর মালিক গুমানীর কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে (০১৯১০৫৪১৯৩৯) সহ অন্য একটি নম্বর থেকে কথা বলে। ওই মোবাইল নম্বর থেকে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার জন্য ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা, ২০ বছর জেলসহ বিভিন্ন শাস্তির কথা জানিয়ে র‌্যাব, পুলিশ ও প্রশাসন ম্যানেজ এর জন্য টাকা দেয়ার কথা বলে।

এমন পরিস্থিতিতে তাঁর শুভাকাঙ্খি ও অন্যান্য ব্যবসায়ীর সাথে আলোচনা করে জানতে পারে বিষয়টি পুরোটাই প্রতারণা। তিনি জানান, বিভিন্নভাবে এলাকার মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় ও নির্যাতনকারী রকির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। রকির এসব কাজের সাথে স্থানীয় একটি চক্র রয়েছে, এই চক্রের সন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও জোর দাবী জানান সালমা বেকারীর মালিক মো. গুমানী।

এব্যাপারে মো. আওয়াল আলী রকি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়গুলো ভুল হয়েছে, বুঝতে না পেরে এগুলো হয়েছে বলে জানায় রকি। তবে, স্থানীয় একটি চক্র এসব করতে পারে বলে প্রতিবেদকের কাছে গতকাল শনিবার বিকেলে স্বীকার করেছে রকি।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদকের কথা হয় ঝিলিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম মতু’র সাথে। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে  জানান, এরকম ঘটনা তিনি শুনেছেন এবং জেনেছেনও। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত পরিষদ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে শনিবার সকালে জানিয়েছেন তিনি।

এব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে  জানান, ইউএনও’র নামে প্রতারণা করে চাঁদাবাজি বা টাকা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। এঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তসিকুল ইসলাম তসি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আসলে এঘটনায় মো. আওয়াল আলী রকি’র কতটুকু যোগসাজস আছে এবং এ চক্রের হোতাসহ জড়িতদের প্রশাসনিকভাবে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.