চাঁপাইনবাবগঞ্জে একসাথে তিন সন্তানের জন্ম, বিপাকে দরিদ্র পরিবার


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের নতুনহাট-হেলালপুর মহল্লার এক পরিবারের এক জননী একসাথে ৩ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ৩ সন্তানের ব্যয়ভার চালানো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন খেটে খাওয়া রাজমিস্ত্রী মাসুদ ও তার পরিবার। এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও ম্যাক্স হাসপাতাল।
জানা গেছে, বিয়ের ৪ বছরে কোন সন্তান না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের নতুনহাট-হেলালপুর মহল্লার মাসুদ-তাজরিন দম্পতি। সংসারে সন্তান পেতে শরণাপন্ন হয়েছেন চিকিৎসকের কাছেও। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রার্থনা শুনেছেন। ঘর আলো করে জন্ম নিয়েছে সন্তান। তবে একটি বা দুটি নয়, একসাথে জন্ম নিয়েছে তিনটি সন্তান। ফুটফুটে তিন সন্তানের জন্ম দিয়ে পরিবারে আনন্দের আমেজ বিরাজ করলেও তাদের লালন-পালন ও চিকিৎসায় অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে বিপদে পড়েছেন রাজমিস্ত্রী মাসুদ ও তার পরিবার।
একসাথে জন্ম নেয়া তিন সন্তানের বাবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের নতুনহাট-হেলালপুর মহল্লার মো. আনসার আলীর ছেলে দিনমজুর মাসুদ রানা (৩২)। তার স্ত্রী মোসা. তাজরিন খাতুন (২২) একসাথে এক ছেলে ও দুই মেয়ের জন্ম দিয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারী সকাল ৯টার দিকে রাজশাহীর আমেনা হাসপাতালে তিনি সন্তান প্রসব করেন তাজরিন।
তবে, সন্তান মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় ও জন্মদানের পর বিপুল পরিমাণ অর্থ চিকিৎসা খরচ হওয়ায় তিন শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পরিবারটি। একদিকে কাজ করে আয় দিয়ে বাবার সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়, অন্যদিকে একসাথে তিন সন্তানের জন্ম। এনিয়ে সমস্যায় মাসুদ রানা। বর্তমানে তিন সন্তানকে নিয়ে তাদের মা তাজরিন খাতুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোশংকরবাটি-নতুনপাড়া মহল্লায় বাবার বাড়িতে রয়েছেন।
মাসুদ রানা বলেন, গর্ভে আসার ৩ মাসেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানতে পেরেছিলাম আমাদের ৩টি সন্তান হবে। জন্মের সময় প্রচুর পরিমানে রক্ত ও স্যালাইন লেগেছে। আমেনা হাসপাতালেই বাচ্চা জন্মদানের পর ৪ দিন থাকাসহ খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এর আগে বাচ্চা জন্ম দেয়ার আগেই বিভিন্ন চিকিৎসা বাবদ প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মায়ের দুধ পর্যাপ্ত না হওয়ায় বাজারে কেনা দুধ খাওয়াতে হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ আমি। এতো টাকা কোথায় পাব, সে চিন্তা করে কোন ক‚লকিনারা পায় না।
মা তাজরিন খাতুন জানান, ইতোমধ্যে তিন সন্তানের নাম রাখা হয়েছে। প্রথম ছেলে সন্তানের নাম তৌসিফ আহমেদ মাহাদীন, দ্বিতীয় মেয়ে তাসফিয়া আক্তার মাসুমা ও তৃতীয় মেয়ে তাবাসসুম আক্তার মালিহা। এখন তারা সকলেই মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। তবে দ্বিতীয় সন্তান তাসফিয়া আক্তার মাসুমার কিছু সমস্যা রয়েছে। তার ওজন বাকি দুইজনের থেকে কম।
তিনি আরও জানান, একটা দুধের কোটা ৭ দিন যায়। এখন যত বড় হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই তাদের দুধ খাওয়ার পরিমাণ ও খরচ দুটোই বাড়ছে। জন্মদানের পর বাসায় নিয়ে আসার পরে ঠান্ডা লেগে যায়। পরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। তাদের এখন ভালো চিকিৎসা দরকার। কিন্তু টাকার অভাবে ভালো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে পারছি না। কারন বাচ্চাদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক। তাজরিনের মা ও তিন সন্তানের নানী মেরিনা বেগম বলেন, বৃদ্ধ বয়সেও আমার স্বামী অটো চালায়। তিনটিই মেয়ে আমার। তাজরিন তাদের মধ্যে সবার ছোট। একসাথে জন্ম নেয়া নাতি-নাতনীদের সবসময় ঠান্ডা লেগেই থাকছে। ভালো চিকিৎসা নেয়া দরকার। স্বামীর অটো চালানোর এতো কম আয় দিয়ে কিছু করতে পারিনা।
প্রতিবেশী গৃহিনী খাইরুন নেসা বলেন, তিনটা বাচ্চার জন্য তিনজন লোক লাগছে। মা ও মেয়ে সন্তানদের নিয়েই সবসময় ব্যস্ত থাকছে। দুইটা মানুষ বাড়ির কাজগুলোও করতে পারছে না। এমনকি রাতেও তাজরিন ঘুমাতে পারে না। কারন কে কখন জেগে উঠছে ঠিক নাই। তাদের এখন খুব ভালো চিকিৎসা দরকার। কিন্তু টাকার অভাবে তা হয়না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হাই বলেন, আমি মাত্র দায়িত্ব পেয়েছি। এসব অসহায় দরিদ্র মানুষকে সাহায্যের বিষয়ে কয়েকজন পুরাতন কাউন্সিলরের সাথে পরামর্শ করেছি। তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি।
বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী জানান, শিশুর জন্মের পর মায়ের দুধের বিকল্প নেই। তবে স্বাভাবিকভাবে তা একটি শিশুর জন্য পর্যাপ্ত। কিন্তু একসাথে তিনজন শিশু হলে মায়ের দুধে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে বঞ্চিত হয় শিশুরা। এতে তাদের মাঝে পুষ্টি ঘাটতি দেখা যায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। তাই বাজারে পাওয়া যায় এমন কৃত্রিম দুধে চাহিদা মেটাতে হয়। একসাথে তিনজন শিশু লালন-পালন করা অনেক কঠিন কাজ ও ব্যয় সাপেক্ষ মন্তব্য করে তিনি আরও জানান, রাজমিস্ত্রী বাবার পক্ষে এতো ব্যয় করা কষ্টকর। তাই আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে এই তিন সন্তানের সকল চিকিৎসা ব্যয় বিনামূল্যে করাবো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের ম্যাক্স হাসপাতালে তাদের ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই এমন অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার নির্দেশনায় সারাদেশে এমন অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা হয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। পরিবারটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা বা সদর উপজেলায় সাহায্যের আবেদন করলে তাদেরকে আর্থিক সহায়তা করা হবে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.