পুড়ছে গাজা, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বজুড়ে ধর্মঘটের ডাক

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দেরিতে হলেও সারাবিশ্বে এখন গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের ডাক শোনা যাবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর বিভিন্ন উদ্যোগ ব্যর্থ হতে হতে এখন বিশ্বব্যাপী অ্যাক্টিভিস্টরা এক হতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, দেখা যাক, কার কথা কানে নেয় ইসরায়েল? তারা ১০ মে বৈশ্বিক ধর্মঘট ও কেনাকাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত দু-দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষত টুইটার সয়লাব হয়ে গেছে গাজায় হামলা বন্ধ ও শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবির পোস্টে। এই শুক্রবার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের জন্য একটি বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান পোস্ট করার ১৬ ঘণ্টার মধ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ আর রিটুইট হচ্ছে। আহ্বানকারীরা বলছেন, এটি সফল হবে যদি আমরা প্রত্যেকে সচেতনতা বাড়াতে এবং ফিলিস্তিনপন্থি গোষ্ঠীগুলোকে আহ্বান জানাতে উৎসাহিত করতে থাকি।
ধর্মঘটের আহ্বান জানানো টুইটার হ্যান্ডেল (@luigidaniele10)-এর পোস্ট থেকে বলা হয়েছে, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, কোনও নেতা বা কেন্দ্রীয় সংগঠন ছাড়াই এটি একটি সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ। আমি শুধু একজন সাধারণ অ্যাক্টিভিস্ট। এই ধর্মঘটের সঙ্গে যারা যুক্ত হচ্ছেন তারা কেউ এই উদ্যোগের ওপর মালিকানা দাবি করবেন না, এবং প্রত্যেককে তাদের নিজস্ব সৃজনশীল শক্তি ব্যবহার করবেন এবং যেকোনও ব্যক্তি তার মতো করে যেকোনও আহ্বান ডাকতে পারেন। যারা এখন এই আহ্বান নিয়ে অনলাইন অ্যাক্টিভিজম করছেন তারা মনে করেন মৌমাছির মতো কাজ করতে হবে। এক সঙ্গে কাজের পাশাপাশি প্রতিটি মৌমাছি নিজের মতো করেও প্রতিবাদ জারি রাখবে।
ধর্মঘটে তাদের আহ্বান, যার যার জায়গা থেকে এই শুক্রবার ১০ মে কাজ করবেন না। কেনাকাটা থেকে বিরত থাকুন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে কোনও লেনদেন করবেন না।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ঘোষণা দিয়ে হামলা করে ইসরায়েল। ৭ মে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস সোমবার মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে আসা গাজা যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েল বলেছে, এই প্রস্তাবের শর্তগুলো তাদের দাবি পূরণ করেনি। তবে চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাফাহতে হামলার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের রাফাহতে ইসরায়েলি হামলার অর্থ হবে ‘আরও মানবিক বিপর্যয়’, এমন মন্তব্যই করেছেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস। যখন বিশ্ব মোড়লদের এই ধরনের বক্তব্য কোনও কাজে আসছে না, তখন আন্তর্জাতিকভাবে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় সাত মাসের এই যুদ্ধে ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জনমত জরিপে দেখা গেছে, চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলিদের মধ্যে বিভাজন ক্রমশ বাড়ছে।
এমনকি ইসরায়েলি সমাজের একটি সংখ্যালঘু অংশ রয়েছে যারা অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরোধিতা করছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উন্মুক্তভাবেই মত প্রকাশ করে বলছে, যা ঘটছে তাতে আমরা ক্ষুব্ধ। ইসরায়েলের এমন মানবাধিকারকর্মীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং সেখানে শিশু হত্যা বন্ধের দাবি তোলায় প্রাণনাশের হুমকিও পেয়েছেন।
ইতোমধ্যে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বিবিসি জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩০-এরও বেশি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছে গত কয়েক সপ্তাহে বিক্ষোভ হয়েছে, তাঁবু স্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দেশটির ৪৫টি রাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ হয়েছে। যা ক্রমে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে তীব্রতা পাওয়া এই বিক্ষোভ এখনও চলমান রয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.