গোদাগাড়ীতে মাদক সম্রাটকে ছেড়ে দিল আর্মড পুলিশ!!!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান বা এপিবিএন বগুড়ার একটি দলের বিরুদ্ধে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া ছাড়াও টাকা না পেলে নকল হেরোইন দিয়ে ফিটিং মামলা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে দলটির বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাস ধরে বগুড়া এপিবিএনের একটি দল এসআই আতাউর রহমান ও এএসআই শিহাবের নেতৃত্বে মাইক্রোবাস নিয়ে শুধুমাত্র রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকাতে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এই দলটিকে কখনো কখনো রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে সড়ক ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন তল্লাশি করতেও দেখা যায়।
গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ী এলাকার লোকজন জানান, গত দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসআই আতাউর ও এএসআই শিহাবের নেতৃত্বে এপিবিএন বগুড়া বিশেষ এই দলটি মহিষালবাড়ী আসক্ত নিরাময় কেন্দ্র (আনিক) মাদারপুর সামনে থেকে হেরোইন ব্যবসায়ী সাইফুলকে আটক করে। তাকে আটকের পর মাইক্রোবাসে করে দলটি তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
এসময় এপিবিএনের দলটি সাইফুলের স্ত্রী হেরোইন সম্রাজ্ঞী রিনাকে উঠতে বলেন। কিন্তু রীনা বাড়ির ভেতর থেকে শক্তভাবে দরজা মেরে রাখেন। ফলে পুলিশের এই দলটি কয়েক ঘন্টা বাড়িটি ঘিরে রেখেও বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পরে পুলিশেরা সাইফুলকে নিয়ে মহিষালবাড়ী মোড়ের পরিতোষের ভাই ভাই হোটেলে নিয়ে বসেন এবং সেখানে পুলিশের দু’জন দালালের এসে উপস্থিত হন। ওইসময় এসআই আতাউর ও এএসআই শিহাবের সঙ্গে দরকষাকষির পর সাইফুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে সাইফুল তার বাড়িতে চলে যান। কীভাবে ছাড়া পেলেন জানতে চাইলে হেরোইন ব্যবসায়ী সাইফুল বলেন, আমার কাছে কোনো মাদক ছিল না। তারপরও তারা ধরে আটকে রাখে কয়েক ঘন্টা। ছুটতে কত টাকা লেগেছে জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, সেটা বলা যাবে না।
সাইফুলের স্ত্রী রীনাও বলেন, মিমাংষা হয়েছে বলে ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে এপিবিএনের অভিযানিক দলের দুই কর্মকর্তা এসআই আতাউর রহমান ও এএসআই শিহাব জানান, তারা ওই রাতে কাউকে ধরেননি এবং কাউকে ছেড়েও দেননি।
মহিষালবাড়ীতে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে থাকি। অন্যদিকে অভিযানি দলের এসআই আতাউর ও এএসআই শিহাব সম্পর্কে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জানা গেছে, এএসআই শিহাব আগে গোদাগাড়ী থানায় কনষ্টেবল ছিল। শিহাবের বাড়ি গোদাগাড়ী থানার পাশর্^বর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে। শিহাব দীর্ঘসময় রাজশাহী জেলা ডিবিতে ছিলেন। এই সময়ে আতাউরও ডিবিতে ছিলেন। এই দুজনের বিরুদ্ধে মাদক ধরে বিক্রি করা, টাকা না পেলে মাদক দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ থাকায় এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এপিবিএনে বদলি করা হয় বছর খানেক আগে। কিন্তু তারা বিভিন্ন উপায়ে গোদাগাড়ী ছাড়তে পারেননি।
অভিযানের কথা বলে তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকাতেই ঘোরাঘুরি করেন দিন রাতের বেশির ভাগ সময়। মাইক্রোবাস ভাড়ায় নিয়ে এপিবিএনের দলটি গোদাগাড়ী এলাকাতেই থাকেন। বিভিন্ন জনকে ধরে ধরে টাকা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে শিহাব ও আতাউরের বিরুদ্ধে। এছাড়া সোর্সের মাধ্যমেও বিভিন্ন জনকে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, এপিবিএন বগুড়া এই দলটি শুধুমাত্র গোদাগাড়ীতেই অভিযান করেন তবে থানা পুলিশের অনুমতি ছাড়াই। ফলে মাঝে মাঝে থানা পুলিশের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। ধরে ধরে টাকা আদায় ও নকল হেরোইন ও ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো প্রসঙ্গে আতাউর ও শিহাব বলেন, অভিযোগগুলি মিথ্যা। তারা কোনো টাকা আদায় করেন না।
এদিকে গোদাগাড়ীর সারাংপুরের বাসিন্দা ঢাকা বাস মাষ্টার মতিউর রহমান অভিযোগে বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যার পর আতাউর ও শিহাবের নেতৃত্বে একদল আর্মড পুলিশ তার ভাই সেরাজুল ইসলাম ওরফে দারোগাকে ধরে সরমংলা মাঠের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করেন।
এসময় সেরাজুল মাদক ব্যবসা করেন না এবং টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালে তার পকেটে ২,শ গ্রাম নকল হেরোইন পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে মামলা দেওয়া হয়। এলাকার লোকজন আরও জানান, এপিবিএনের দলটি এভাবেই বেশ কিছুদিন ধরে টাকা আদায় করে আসছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.