গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে পেখম মেলে ময়ূরীকে আকর্ষণে ব্যস্ত ময়ূর

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক: পাখা ছড়িয়ে চমৎকার নৃত্য প্রদর্শনের জন্য বিখ্যাত ময়ূর। তার এ চোখ জুড়ানো প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে আছে। এ কারণ হচ্ছে প্রজননের সময় অন্য ময়ূরীদের আকৃষ্ট করা। বর্ষাকাল মূলত ময়ুরের প্রজনন কাল। বর্ষাকালের আগমনী বার্তার সঙ্গেই গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ময়ুর বেষ্টনী যেন নজর কেড়েছে পার্কে আসা দর্শনার্থীদের। এখন ময়ূর তার পূর্ণ পেখম মেলে যেমন ময়ূরীকে যেমন আকর্ষণে ব্যস্ত তেমনি তার পেখম মেলা দৃশ্য পার্কে আসা দর্শনাথীদের বিনোদনের একটি অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ময়ূরের চমৎকার প্রদর্শনের প্রতি ময়ুরীর বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। আকর্ষণীয় নৃত্য প্রদর্শনকারী ময়ুরকে ময়ূরী সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়।

সাফারী পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বাসসকে জানান, ময়ূরের প্রজননের সময় বর্ষাকাল। আর বর্ষাকালে ময়ূরীর সঙ্গে মিলনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণে পেখম মেলে ময়ূর। যে ময়ূর পেখম তুলে যত সুন্দর নাচ প্রদর্শন করতে পারবে মিলনের জন্য সে তত ময়ুরীর প্রতি আকর্ষিত হবে। ময়ূর প্রথমে তার লম্বা পেখম সামনের দিকে বাঁকা করে পাখার মতো ছড়ায়। এরপর সে তার নজরকাড়া নাচ শুরু করে। সে যখন তার শরীর ঝাঁকায় তখন রঙিন বর্ণের পালকগুলো এর শরীরের দু’পাশে ঝুলে থাকে। এই ঝাঁকুনির ফলে খাড়া হয়ে থাকা পালকগুলো মমর্রধ্বনি করে। এ ছাড়া সে জোরে চিৎকার করে। এটা তেমন সুরেলা নয় কিন্তু এটা অন্তত ময়ূরীকে জানায় যে, সে তার প্রতি মিলনে আগ্রহী।

ময়ূররা একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত ময়ূরী সঙ্গিনী হিসেবে রাখে এবং এক বছরে প্রায় ২৫টির মতো ডিম দেয়।
পার্কে ময়ূরের পেখম মেলার দৃশ্য এখন পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরাও সংরক্ষিত ময়ূর বেষ্টনীতে ভিড় করছেন।

ময়ূর ফ্যাজিয়ানিডি প্রজাতির সুন্দর একটি প্রাণি। এশিয়ান অঞ্চলে সাধারণত দু’ধরনের ময়ূরের দেখা যায়। এদের রং হয় নীল ও সবুজ, মাঝে মাঝে সাদা রংয়ের ময়ূরের দেখাও মেলে। এরা সাধারণত বনের ভেতর মাটিতে বাসা বাঁধে। আর সাধারণত চারা গাছের অংশ, কীটপতঙ্গ, বীজের খোসা, ফুলের পাপড়ি এবং ছোট ছোট সন্ধিপদ প্রাণি খায়। এরা ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এদের বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। বাচ্চাগুলো বিপদ দেখলেই মায়ের ডানার নিচে লুকায়। ময়ূরের ছোট বাচ্চারা মুরগির বাচ্চার মতই বেড়ে উঠে। আকারের দিক দিয়ে ময়ূর ৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এদের পেখমের দৈর্ঘ্য তিন ফুট পর্যন্ত হয়। এদের পেখমে রয়েছে নীল, সবুজ, সোনালীসহ বাহারী রঙের সমাহার।

ময়ূর কিন্তু তার এ সুন্দর পেখম নিয়ে জন্মলাভ করে না। ৩ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ময়ূরের লেজ জন্মে না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের স্ত্রী ও পন্তুষ হিসেবে আলাদাভাবে বোঝা যায় না। ময়ূর এবং ময়ূরী দেখতে একদম একই রকমের হয়ে থাকে। ৬ মাস বয়স থেকে ময়ূর রং বদলাতে শুরু করে। ময়ূর প্রতি বছর তাদের প্রজননের পর পেখম বদলায়। সে সময় পাখাগুলো দেহ থেকে ঝরে পড়ে। ময়ূর গড়ে ২০ বছর বাঁচে। বিশাল পেখম থাকা সত্ত্বেও ময়ূর উড়তে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, পার্কের সূচনালগ্নে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে ময়ূর আনা হয়। বর্তমানে এর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিছু ময়ূরকে পার্কের আবদ্ধ পরিবেশ থেকে উন্মক্ত করে দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে তাদের পরিচর্যা করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি তাদের বিশেষ যত্ন নেয়ায় দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটছে ময়ূরের। বর্ষাকালে পার্কের ময়ূর বেষ্টনীতে দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন। ( সূত্র: বাসস )#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.