গংগাচড়ার প্রাথমিক শিক্ষা দুই গ্রুপের শিক্ষক নেতাদের কাছে জিম্মি//সাধারণ শিক্ষকরা বদলী, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বিনোদন ভাতা, জিপি লোন, অবসর ভাতা নিয়ে বিপাকে

রংপুর ব্যুরো:  রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম দুই গ্রুপের শিক্ষক নেতাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। একপক্ষের শিক্ষক নেতারা বিষয়টি জানিয়ে ইউএনও এবং জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদন করলেও অন্যপক্ষ অভিযোগ দেয়ার জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করছেন।

ফলে এর সুফল নিচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা। আর সাধারণ শিক্ষকরা বদলী, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বিনোদন ভাতা, জিপি লোন, অবসর ভাতা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন।

গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, এই উপজেলায় ১৮২টি সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এখানে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৯০০জন। এসব শিক্ষক দুটি ভাগে বিভক্ত।

একপক্ষ উপজেলা শিক্ষা অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অন্যান্যদের আনুকুল্য পায়। অন্যপক্ষ পায় না। তাদের দুই পক্ষের বলি হয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন সাধারণ শিক্ষকরা।

এরই মধ্যে শিক্ষা অফিসের আনুকল্য পাওয়া শিক্ষক নেতাদের আনুকল্য না পাওয়া গ্রুপটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরুর কথা বলেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দেয়া গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের আনুকল্য পাওয়া শিক্ষক নেতাদের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, গঙ্গাচড়া শাখার সভাপতি ও শেরপুর পুটিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু রেজা মো. শামসুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক ও  সভাপতি চিলাখাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম চাঁদ, সদস্য ঠাকুড়াদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজু আহম্মেদ, নগরবন্দ বড়াইবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুকুজ্জামান আলমবিদিতর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়ারেছের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ব শিক্ষক সিন্ডিকেট গংগাচড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করছেন।

তাদের কাছে জিম্মি উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সাধারণ শিক্ষকেরা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, এই সিন্ডিকেটের কথা মতো কাজ না করলে সাধারণ শিক্ষক ও অফিসারদের বহিরাগত লোকজন দিয়ে জিম্মি, গালিগালাজ, লাঞ্চিত করা হয়।

শিক্ষক বদলী, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, শ্রান্তি, বিনোদন ভাতা, জিপি লোন, অবসর ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষকগণকে বাগিয়ে আনার জন্য ওই সিন্ডিকেট প্রতি ইউনিয়নে এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তারা প্রথমে সাধারণ শিক্ষকদের জানিয়ে দেন-তাদেরকে ছাড়া অফিসে বদলিসহ কোন কাজ হবে না।

প্রথমে তারা বহিরাগত শিক্ষকদের মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মদনপুর, বৈরাতি, মটুকপুরচর, মটুকপুর, সাউদপাড়া, লাখেরাজটারী, মৌভাষা, কুতুব, শংকরদহ নতুন, শংকরদহ পুরাতন ইত্যাদি অধিক দুরত্বের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বহিরাগত শিক্ষকদের বদলী ব্যবস্থা করেন।

পরে বদলীকৃত শিক্ষকরা যখন দেখেন দুর ও যাতায়াতে অনেক কস্ট হয়। তখন তারা আবার ওই সিন্ডিকেটের কাছে ধরনা দেয়া কাছাকাছি জায়গায় বদলি করার জন্য দেনদরবার করতে থাকেন।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই সিন্ডিকেটটি দ্বিতীয় দফায় টাকা নিয়ে তাদের কম দুরত্বের স্কুলে বদলি করানোর ব্যবস্থা করেন।

এরকম কয়েকজন শিক্ষক হলেন মদনপুরবৈরাতীর শাহানাজ বেগম, মটুকপুর চরের হীরা রায়, আলমবিদিতরের ইসমত আরা, গংগাচড়া মডেল স্কুলের মোতাহারুল ইসলাম।

 লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, সিন্ডিকেট শিক্ষকগন অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মাস্টারপ্লান করেন। প্লান অনুযায়ী কোন শিক্ষককে কোন বিদ্যালয়ে দিতে হবে, কার পরিবর্তে কাকে দিতে হবে ছক আঁকেন।

এরপর তারা টাকাসহ বদলীর আবেদন নিজেদের হাতে নেন। জানুয়ারী মাসের শুরু থেকেই এসব নেতা আবেদনপত্র নিয়ে দলবলসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট গিয়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে নিজেদের আবেদনগুলো পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন।

২০১৭ সালে ৩৪ জন শিক্ষকের নিকট মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে এই সিন্ডিকেটটি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দিয়ে বদলীর প্রস্তাব পাঠান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।

বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই ৩৪ জনের বদলীর অনুমতির ফাইলে সই করেন নি। পরবর্তীতে উক্ত শিক্ষকদের বদলীর আদেশ ২০১৮ সালে হয়।

তখন সিন্ডিকেটটি উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে যোগদানের আদেশের কপি হাতে নিয়ে প্রধান শিক্ষক ফারুকুজ্জামান স্বপনের দোকান থেকে বিতরণ করে। বিতরণকালেও শিক্ষক সমিতির নামে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার চাঁদা নেয়া হয়।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারীর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটটি সহকারী শিক্ষকের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করেন। তারা গংগাচড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন।

এসময় ৫২ জনকে চলতি দায়িত্ব দেয়ার কথা বলে বিভিন্নভাবে টাকা উত্তোলন করেন শিক্ষকদের কাছ থেকে। এছাড়াও পদায়নের সময় স্থানীয় এমপি মসিউর রহমার রাঙ্গা’র ডিও লেটার নিতে হবে, না নিলে অধিক দুরত্বে পোষ্টিং হবে বলে ত্রিশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার করে টাকা উত্তোলন করে।

তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়ায় গংগাচড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোনাক্কা বেগমসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে অনেক দুরে পোষ্টিং দেয়ার ব্যবস্থা করেছে সিন্ডিকেটটি।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকায় আন্দোলনের নামে শিক্ষকনেতারা প্রতিজন সাধারণ শিক্ষকের কাছ থেকে পাঁচশত টাকা কওে বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করেন। এভাবে উপজেলার ১৮২ টি স্কুলের প্রায় ৯০০ শিক্ষকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ উত্তোলন করে সিন্ডিকেটটি। কিন্তু ঢাকায় যায় গুটি কয়েক শিক্ষক। বাকি টাকাটা সিন্ডিকেটটি আত্মসাত করে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগের নামে ওই শিক্ষক সিন্ডিকেটটি চাকরির আবেদনকারীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে চাকরি কনফার্ম করে দেয়ার নামে চার থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ গ্রহন করেছেন।

যাদের চাকুরী হয়েছে তারও টাকা নিয়েছে আর যাদের চাকুরী হয়নি তাদের টাকা ফেরতও দেয়া হয় নি। বর্তমানে ৩২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কামপ্রহরী নিয়োগ চলমান আছে।

প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে তারা মোট অংকের উৎকোচ নিয়ে রেখেছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে তাদের দৌঁড়ঝাপ বেড়ে যাবে। তারা বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট টাকা নেয়োর কারণে ও তাদের দলাদলিতে মহিষাশুর, বড়রুপাই, শেখপাড়াসহ অনেক বিদ্যালয়ে অদ্যাবধি এই নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষকদের এই সিন্ডিকেটটির কথার বাইরে গেলেই উপজেলা শিক্ষা অফিসার,সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সাধারণ শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি, গালিগালাজসহ সম্মানহানি করে হয়।

২০১৪ সালে তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার আতিকুর রহমান ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের যৌথ স্বাক্ষরে বিভিন্ন প্রকার হুমকি, গালিগালাজসহ লাঞ্চিত করায় প্রতিবাদে (যার একটি অডিও রেকর্ড আছে) শফিকুল ইসলাম চাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হয়।

কিন্তু এদের হাত এতই শক্তিশালি যে আজ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ মার্চ দুপুর ২ টায় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অ আবু রেজা মো. শামসুল কবীরকে ও সেক্রেটারী শফিকুল ইসলাম চাঁদ বদলির তদবির না শোনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম আসাদুজ্জামানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষকরা মানববন্ধন করেন।

শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী শফিকুল ইসলাম চাঁদ সমাপনী পরীক্ষার খাতা মার্কিং চলাকালীন সময়ে নিজের পছন্দের শিক্ষককে খাতা না দেয়ায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাগমা সিলভিয়া খানের সাথে খারাপ আচরণ করেন।

অন্যদিকে সমাপনী পরীক্ষায় বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষকগনের ডিউটির তালিকা শফিকুল ইসলাম চাঁদকে জিজ্ঞাসা না করে প্রস্তুত করায় তৎকালীন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার(বর্তমান উপজেলা শিক্ষা অফিসার) সায়লাপারভীনকে হুমকি ও গালিগালাজ করে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী চাঁদ।

এই সিন্ডিকেটটি এভাবে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুশফিকুর রহমান, আব্দুস সালাম, সম্ভুচরণ দাস, জয়তী চৌধুরী সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ ও লাঞ্চিত করে থাকেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষক সমিতির এই সিন্ডিকেটটি তাদের নিজ বিদ্যালয়ে খুব কম উপস্থিত থাকেন। সকাল থেকেই তারা শিক্ষা অফিসে ও গংগাচড়া বাজারে অবস্থান করেন।

বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শফিকুল ইসলাম চাঁদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে না গিয়ে একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী ওয়ার্ক করার অভিযোগ এনে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাজু আহমেদ লাল।

এছাড়াও আলমবিদিতর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়ারেছ ঋণদান সংস্থা (কালব) এর সভাপতি। তিনি স্কুল বাদ দিয়ে ঋণদানের ক্ষেত্রে কাগজপত্র যাচাই বাছাই, মিটিং এ ব্যস্ত থাকেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল খলেয়া ক্লাষ্টারের প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্পিকার বিতরণ করার সময় দোন্দরা সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক, সাইফুল ইসলাম ও সুনীল চন্দ্রসহ কয়েকজন শিক্ষক আগত প্রধান শিক্ষকগণের তিনটি করে স্বাক্ষর নেয়।

অন্যদিকে গংগাচড়া উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে প্রশিক্ষণরত ২৫ জন প্রধান শিক্ষকের নিকট স্বাক্ষর নেন ঠাকুড়াদহ সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক সাজু আহম্মেদ।

কোলকোন্দ ইউনিয়নে স্বাক্ষর নেন চিলাখাল সপ্রাবির সহকারি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম চাঁদ। তারা শিক্ষকদের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষর নিচেছন।

গণস্বাক্ষরে স্বাক্ষরকারী বড়বিল সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী, কুটিপাড়া সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক, মটুকপুর সপ্রাবি প্রধান শিক্ষক রইছুল ইসলাম, দক্ষিণ কোলকোন্দ মাষ্টারপাড়া সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিনসহ খলেয়া ক্লাষ্টারের প্রধান শিক্ষকগণ জানান, তারা আমাদের নিকট একটি স্বাক্ষরের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেন স্বাক্ষর করেন। কিসের স্বাক্ষর নিচ্ছেন কিজ্ঞেসা করলে তারা জানান, সকলেই দিচ্ছে আপনার দিলে অসুবিধা কি?

খলেয়া ইউনিয়নের শিক্ষকগণ বিটিসি নিউজকে জানান, শেরপুর পুটিমারী সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু রেজা মো. শামসুল কবীর এ স্বাক্ষরের কাগজটি পাঠিয়েছে সকল প্রধান শিক্ষকের নিকট স্বাক্ষর নিতে। কিসের কারণে স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে তার স্পষ্ট জবাব কেউ দিতে পারেনি।

লিখিত অভিযোগকারী শিক্ষক নেতা জয়দেব সপ্রাবি সহকারী শিক্ষক মোঃ আব্দুল হামিদ ও গঙ্গাচড়া মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহেদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, আমরা সাধারণ শিক্ষকগণ ওই সিন্ডিকেটটির দুর্নীতি ও অন্যায়ে বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মানববন্ধন করেছি।

তাদের হাত থেকে গঙ্গাচড়ার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাঁচানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যপাওে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। উল্টো সিন্ডেকেটটি সাধারণ শিক্ষকদেও হয়রানি করতে নানা ধরনের পাঁয়তারা করছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম আসাদুজ্জামান বিটিসি নিউজকে জানান,  শেরপুর পুটিমারী সপ্রাবি এর প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু রেজা মো. শামসুল কবীর ও সাধারণ সম্পাদক চিলাখাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম চাঁদকে স্কুলে কখনই আমার সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা গিয়ে পান না।

তাদের এবং তাদের সিন্ডিকেটের অনৈতিক তদবির না শোনায় তারা আমাকে অফিসে এসে লাঞ্ছিত করেছে।অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করেছে। তারা আমাকে বদলি করারও হুমকি দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটটির তদবিরের কারনে আমরা সঠিকভাবে কাজও করতে পারছি না।

এ ব্যপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আনুকল্য না পাওয়া বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গঙ্গাচড়া শাখার সভাপতি  আবু রেজা মো. শামসুল কবীর বিটিসি নিউজকে জানান, আমি কখনই স্কুল ফাঁকি দেই না। যার প্রমান আমার স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী এলাকাবাসি ও আমার শিক্ষকরা। আমি কোন টাকা নিয়ে তদবিরও করি না।

একজন শিক্ষক নেতা হিসেবে কোন সাধারণ শিক্ষক আমার কাছে কোন বিষয়ে বললে আমি অফিসারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করি কাজটি করে দেয়ার জন্য। আর আমরা কোন সরকারবিরোধী কাজের জন্য স্বাক্ষর নেই নি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং তার নেতৃত্বাধীন শিক্ষকদের কারনে উপজেলার পুরো প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাচ্ছে, বিভিন্ন অনিয়ম হচ্ছে, আমাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আছে সেগুলোর বিষয়ে লিখিত আবেদন করার জন্য আমরা স্বাক্ষর নিচ্ছি।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গঙ্গাচড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম চাঁদ বিটিসি নিউজকে জানান, যেসব শিক্ষক অভিযোগ করেছেন-তাদের সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে উপজেলা শিক্ষা অফিসার দলী, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বিনোদন ভাতা, জিপি লোন, অবসর ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করছেন। আমরা সেগুলোর প্রতিবাদ করায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারই আমার সভাপতিকে লাঞ্ছিত করেছেন।

এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ বিভিন্ন জায়গায় দাখিল করেছেন। আমরাও তাদের অপকীর্তির বিষয়ে লিখিত আবেদন দেয়ার জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করছি।

এ ব্যপারে জানতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানান, গঙ্গাচড়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষক ও অফিসারদেও জিম্মি করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, হয়রানীর বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি।

পরীক্ষা, প্রাথমিক নিয়োগের প্রস্তুতিসহ নানা কারনে বিষয়টি নিয়ে এখনও তদন্ত কমিটি করা সম্ভব হয় নি। তবে কযেকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত টিম করা হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করবেন টিম। এরপর যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.