খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল অরক্ষিত

এইচ এম আলাউদ্দিন: খুলনা ব্যুরো: স্বাধীনতার তিন বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে স্থাপিত হয়েছিল খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। খুলনা মহানগরীর ফুলবাড়িগেট মিরেরডাঙ্গায় চার একর জমির ওপর নির্মিত এ হাসপাতালটি ভৈরতের তীরে অবস্থিত।
হাসপাতালটি গতকাল সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) পরিদর্শনকালে দেখা গেলো একটি ডাক্তার কোয়ার্টার, একটি নার্স ডরমেটরী, একটি ফার্মাসিষ্ট আবাসিক কোয়ার্টার আর আইসোলেশন(ভাইরাস সংক্রমিত না হয় এমন ওয়াড) ওয়ার্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের থাকার জন্য একটি কোয়ার্টারে থাকছেন দু’জন ওয়ার্ডবয়। বাগান বেষ্টিত অনেকটা শাপ-কোপের মধ্যেই তাদের বাস। আবাসিক এলাকাগুলোর দরজা-জানালা সব ভেঙ্গে নিয়ে গেছে মাদক সেবিরা।
টেলিফোনের তারও চোরে নিয়ে গেছে। ফলে হাসপাতালটির সাথে তার যোগাযোগ এখন বিচ্ছিন্ন। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে সেখানে বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
হাসপাতালটির গেটে লেখা রয়েছে, ‘হাসপাতাল চত্বরে গরু/ছাগল চরানো নিষেধ’। কিন্তু দুপুরে গিয়ে হাসপাতালের বাউন্ডারীর মধ্যেই একটি গরু বাধা অবস্থায় দেখা যায়। জানতে চাইলে হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার বলেন, স্থানীয় লোকজনকে বললে কেউ শোনে না। তারাও এ ব্যাপারে অনেকটা অসহায়। সব মিলিয়ে অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এ হাসপাতালটি।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, গতকাল সোমবার দুপুরে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কোন রোগী ছিল না। ডিউটি ডাক্তার(উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) কমলেশ পোদ্দার বলেন, গরমের সময়ই এ হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকে। একজন রোগী ছিল গতকাল সকালে তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
শীতের সময় ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ কমই থাকে। তবে মার্চ-এপ্রিলে যখন রোগীর চাপ বাড়ে তখন জনবলের সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে তিনজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিষ্ট, ছয়জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, দু’জন ওয়ার্ডবয় এবং পাঁচজন আউটসোর্সিং কর্মচারী কর্মরত রয়েছে বলেও হাসপাতালের সূত্রটি জানায়।
তবে একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। প্রেষণে কর্মরত আছেন ছয়জন সিনিয়র স্টাফ নার্স। তার মধ্যেও একজন গতকাল ছিলেন ছুটিতে। একটি আয়া পদ থাকলেও সেটি বর্তমানে শূণ্য আছে।
হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট অরিন্দম মল্লিক বললেন, বর্তমানে কলেরা স্যালাইন ছাড়া কোন ওষুধের সংকট নেই। এছাড়া গ্রীষ্ম মৌসুমে যখন রোগীর চাপ থাকে তখন সংকট আরও বাড়ে। এজন্য গরম আসার আগেই হাসপাতালটির দিকে নজর দেয়া দরকার বলেও তিনি জানান।
খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের মাধ্যমে একাধিকবার হাসপাতালটি সংস্কার করে বিশেষ করে পুরাতন ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি একাধিকবার করা হয়েছে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এছাড়া খুলনার সিভিল সার্জনের আওতাধীন এ হাসপাতালটির উন্নয়নে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি লেখালেখি হয়েছে। অথচ ১৯৬৮ সালে স্থাপিত এ হাসপাতালটি এখনও মাত্র ২০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবেই চলছে।
চতুর্থ শ্রেণির পদ সৃষ্টি দরকার উল্লেখ করে হাসপাতালের সূত্রটি বলছে, বর্তমানে আউটসোর্সিং হিসেবে যেসব কর্মচারীদের পদায়ন করা হয়েছে তাদের দিয়ে অফিসিয়াল তেমন কাজ হয়না।
কেননা তারা যেহেতু ঠিকাদারের আওতাধীন কর্মচারী এজন্য চাকরী স্থায়ী না হওয়ার আতংকতে থাকেন তারা। আবার বিগত ছয়মাস ধরে তারা চাকরী করলেও এখনও কোন বেতন হয়নি। শুধুমাত্র বিগত ঈদের সময় নামমাত্র কিছু টাকা দেয়া হয়। এতে আদৌ তাদের চাকরী থাকবে কি না তা নিয়েই তাদেরকে থাকতে হচ্ছে শংকায়। পদ সৃষ্টির দরকার ডাক্তার ও নার্সেরও। তা না হলে গ্রীষ্ম মৌসুমে অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেষণে এনে হাসপাতাল পরিচালনা করতে হয়।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তিনি সবে যোগদান করেছেন। সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেই ঢাকায় ট্রেনিংয়ে যান। আজ মঙ্গলবার তিনি অফিস করবেন। এরপর তিনি সিভিল সার্জনের আওতাধীন সব প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন এবং মাশরুর মুর্শেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.