খুলনার জুট স্পীনার্সের ৫ মালিক আদালতে, এক মাসের জামিন মঞ্জুর

 

খুলনা ব্যুরো: শ্রমিকদের মজুরি না দিয়ে মিল বন্ধ করে দেয়া নগরীর শিরোমনির জুট স্পীনার্সের পাঁচ মালিক বৃহস্পতিবার খুলনার শ্রম আদালতে হাজির হন। শ্রম অধিদপ্তরের দায়েরকৃত একটি ফৌজদারী মামলায় তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত এক মাসের জামিন দেয়।

মামলার আসামিরা হলেন, ওই মিলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সামস-উল-হুদা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সামস-উজ্জ-জোহা, পরিচালক মোহাম্মদ সামসুল কাদির, নির্বাহী পরিচালক ফাইজুর রহমান চৌধুরী ও মহাব্যবস্থাপক এনামুল হক মুরাদ। মিলটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। গত ৭ জুন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে পরিচালক মো: মিজানুর রহমান। ওইদিনই খুলনা শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম হাওলাদার আসামীদের প্রতি সমন জারি করেন। সমনে গতকালকের মধ্যে(২১জুন) আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, মালিকানা নিয়ে জটিলতায় ২০১৬ সালের পয়লা জুন থেকে জুট স্পীনার্সের উৎপাদন কাযক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে শ্রমিকদের ৮০ সপ্তাহের মজুরি, কর্মচারীদের ২৪ মাসের বেতন, কর্মকর্তাদের ২৫ মাসের বেতন, শ্রমিকদের ৩টি বোনাস, পদত্যাগকৃত শ্রমিকদের গ্রাচুইটি, ইনক্রিমেন্ট ও মজুরি কমিশনের ৩ মাসের এরিয়া, মহিলা শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ভাতা ও মৃত শ্রমিকদের ইন্সুরেন্স বকেয়া রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মিল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলের সিবিএ নেতাদের একাধিকবার আলোচনা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। গত ১১ মে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলের উৎপাদন চালু ও বকেয়া বেতন পরিশোধ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।

কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি মিল কর্তৃপক্ষ। ফলে শ্রমিক কর্মচারীরা কাজ ও মজুরি না পেয়ে আতংকে ভুগছে ও তাঁদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় মিলের সিবিএ’র আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মালিক পক্ষকে গত ৬ জুন খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরে উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠায় শ্রম দপ্তর। কিন্তু ওই নোটিশে সাড়া না দিয়ে মালিকপক্ষের কেউ হাজির হয়নি। এতে শ্রম আইন লঙ্ঘন হওয়ায় পরদিন শ্রম আদালতে ফৌজদারি মামলা করে বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক।

খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, শ্রম আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী ত্রিপক্ষীয় সভায় মিলের মালিকপক্ষ হাজির না হওয়ায় পরদিন ৭ ধারা অনুযায়ী মামলা করা হয়। ওই মামলা আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন আদালত। বৃহস্পতিবার আসামিরা আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। পরে আদালত তাঁদের এক মাসের জামিন দেন ও মিলের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে এগিয়ে যেতে বলেন। আগামী ২২ জুলাই মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারিত আছে বলে জানান তিনি।

আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন প্রবীন আইনজীবী এড. বজলুর রহমান এবং বাদীপক্ষে বাদী বিভাগীয় শ্রম পরিচালক মো: মিজানুর রহমান নিজেই শুনানীতে অংশ নেন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম হাওলাদার এক মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।

তবে শ্রমিকদের পক্ষে মামলাটি দায়ের হলেও বৃহস্পতিবার শ্রম আদালতের আশপাশে কয়েকজন শ্রমিক নেতাকে মালিকপক্ষের সাথে গোপন বৈঠক করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মালিকদের আস্থা অর্জনে এ মামলার সাথে তারা জড়িত নন বলেও দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জামিন পাওয়ার পর মামলার একজন আসামী বলেন, মিলটি চালু অথবা শ্রমিকদের বেতন মজুরী দেয়ার জন্য তারা ব্যাংক ঋণের চেষ্টা করছেন। ঋণ পেলেই তারা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী প্রদান করবেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.