নাগেশ্বরীতে অসহায় পরিবারের উপর হামলা ও ভাঙচুর, ৬ জনের নামে মামলা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জমি সংক্রান্ত জেরে এক অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের উপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামী করে নাগেশ্বরী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন হামলার শিকার পরিবার। এদের মধ্যে একজনকে আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রতনপুর বানিয়াটারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার মৃত হাজী আলিমুদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মজুনু মিয়ার সাথে বেমাতা ভাই আব্দুল মোন্নাফ বাবুর দীর্ঘদিন যাবৎ জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। বিরোধের জেরে আব্দুল মোন্নাফ বাবুর পরিবার বিভিন্ন সময় মজনু মিয়ার পরিবারের ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণ নাশের হুমকী দিয়ে আসছে।
এক পর্যায়ে গত ৩০ এপ্রিল সকালে মোন্নাফ আলী বাবু, তার স্ত্রী, ছেলেসহ কয়েকজন মিলে লাঠি-সোঠা, লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে, মজনু মিয়ার বাড়িতে হামলা করে ঘরের বেড়া ও দরজা-জানালাসহ ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। এ সময় মজনু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম (৪৫) বাধা দিতে গেলে তার উপর হামলা চালিয়ে বেদম মারপিট করে।
এমনকী আব্দুল মোন্নাফ বাবুর হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপানোর চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তিতে কোপটি হাতে লেগে হাত কেটে যায়। এছাড়াও সাহিদা বেগমকে বিবস্ত্র করে শ্লিলতাহানীর অভিযোগও রয়েছে নাহিদ হোসেন, নাঈম হোসেন এবং রনি মিয়াসহ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। পরে মায়ের আর্ত চিৎকারে ছেলে শাহিন আলম (২৫) মাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তাকেও এলাপাথারী মারপিট করতে থাকে তারা।
এ সময় নাজমুল হোসেন নামের একজন হামলাকারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাহিন আলমের মাথায় কোপানোর চেষ্টা করলে কোপ ঠেকাতে গিয়ে হাতের কব্জি কেটে যায় শাহিনের। এতে সে মাটিলে লুটিয়ে পড়লে খোরশেদ আলম শাহিনের বুকের উপর উঠে গলা চিপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যাচেষ্টা করে।
এ সময় শাহিনের চিৎকার শুনে স্ত্রী আশা মনি এগিয়ে আসলে তাকেও মারপিট করে শ্লিলতাহানীর চেষ্টা করে এবং আশা মণির গলায় থাকা ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেন ছিনতাইসহ ঘওে থাকা ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিনতাই করে বলেও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। এমনকী মজনু মিয়া এসে ঠেকানোর চেষ্টা করলে তাকেও মারপিট করে আহত করে।
পরে হামলার শিকার আহতদেরকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে নাগেশ^রী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান স্থানীয়রা। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মজনু মিয়া বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে নাগেশ^রী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, আব্দুল মোন্নাফ বাবু (৬০), খোরশেদ আলম (৫৮), আব্দুল মোন্নাফ বাবুর ছেলে নাজমুল হোসেন (৩৫), নাহিদ হোসেন (২৫), নাঈম হোসেন (২২) এবং খোরশেদ আলমের ছেলে রনি মিয়া (২৫)। পরে অভিযুক্তদের মধ্যে ১ নং আসামী আব্দুল মোন্নাফ বাবুকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন থানা পুলিশ।
বিষয়টি জানতে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, তার যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। বাবুর বিরুদ্ধে মাছ চুরি, বালু ব্যবসা, গাছ কেটে বিক্রি, মানুষের বসত বাড়ি ভেঙ্গে দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় আবু বক্কর বলেন, আমাদের বসতভিটার সাথে মোন্নাফ বাবুর জমি থাকায় সে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদের বসত ভিটার অনেক অংশ জমি ভেঙ্গে নিয়েছে। সে ভিটা বেঁধে দেয়ার কথা বললে এখন বিভিন্নভাবে হুমকী প্রদান করেন। একই অভিযোগ করেন আবু তালেব নামের আরেক ভুক্তভোগী। বাবু আমাদের বড় বড় গাছ কেটে বিক্রি করেছে। আমাদের বাড়ি ও বাগানের জমি ভেঙ্গে নিয়েছে তার জায়গায়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে আমি বসতবাড়ী স্থানানন্তর করতে বাধ্য হয়েছি। এ বিষয়ে কথা বলতে আব্দুল মোন্নফা বাবুর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেলও পলাতক থাকায় কাউকে পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস.আই আশরাফুদ্দৌলা বিটিসি নিউজকে বলেন, মামলার পর সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাদীপক্ষের কাছে শুনেছি ৪ জনের জামিন হয়েছে। তবে এখনও কাগজ হাতে পাইনি। আরেকজন পলাতক রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.