কোভিড-যুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর অস্ত্র কর্মসংস্কৃতি 

(কোভিড-যুদ্ধে নরেন্দ্র মোদীর অস্ত্র কর্মসংস্কৃতি–ফাইল ছবি)
কলকাতা-হাওড়া (পশ্চিমবঙ্গ) প্রতিনিধি: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে মন্ত্রীদের কর্ম-সংস্কৃতির উপরে বিশেষ জোর দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মন্ত্রীসভা ঢেলে সাজানোর পরের দিনই, গতকাল বৃস্পতিবার (০৮ জুলাই) সন্ধ্যেয় তিনি নতুন টিমের সদস্যদের মুখোমুখি হন ভার্চুয়াল বৈঠকে। বুঝিয়ে দেন, তৃতীয় ঢেউ আটকানোই এখন তাঁর অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে। কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইকে জোরদার করতে ২৩,১২৩ কোটি টাকার জরুরি স্বাস্থ্য প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়েছে বৈঠকে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ২০ হাজার নতুন আই সি ইউ বেডও প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) ও অক্সিজেন সরবরাহের ব্যাপারে স্বাস্থ্য-কর্তাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই  আপসহীন লড়াইতে কোনওরকম  গাফিলতি কিংবা দীর্ঘসূত্রতা যে বরদাস্ত করা হবে না, মন্ত্রীদের বৈঠকে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্যকে তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর উদ্বেগ, করোনা কমলেই বিভিন্ন জায়গায় ফুটে উঠছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অসচেতনতার ছবি। মাস্ক পরা বা ভিড় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আত্মতুষ্টি  কিংবা শুধুমাত্র একটিমাত্র ভুলই যে সবকিছু ভন্ডুল করে দিয়ে ডেকে আনতে পারে মারাত্মক বিপদ,সে ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সতর্কবার্তা, ‘ মানুষের মধ্যে অযথা ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। বরং আগামিদিনে আমরা যাতে এই মহামারীর কবল থেকে মুক্তি পেতে পারি, সেজন্য সাধারণ মানুষকে সবরকম সতর্কতা অবলম্বনের আর্জি জানাতে হবে।’
 করোনা বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশল স্থির করতে এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে দ্বিতীয় পর্যায়ে আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) আবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদী। আলোচনায় প্রাধান্য পায় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়টি। স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে তথ্য চান প্রধানমন্ত্রী। অক্সিজেনের সঙ্কট তৃতীয় ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়াইকে যাতে দুর্বল করে দিতে না পারে তার জন্য আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
নয়া মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, সংবাদমাধ্যমের কাছে যখন-তখন মুখ খোলা যে তাঁর মোটেই পছন্দ নয়, তা দ্বিধাহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীদের প্রতি তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ,জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুখ খুলবেন না। নিখুঁত কর্ম-সংস্কৃতি গড়ে তুলতে মন্ত্রীদের তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাড়িতে বসে কাজ নয়। নিয়মিত অফিসে ঢুকতে হবে সকাল সাড়ে ৯ টার মধ্যে। নতুন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণর দফতরে প্রশাসনিক কাজকর্ম শুরু হবে ভোর থেকে, চলবে মাঝরাত পর্যন্ত।
এদিকে করোনা-যুদ্ধে ২৩ হাজার ১২৩ কোটি টাকার যে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তারমধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি খরচ করবে কেন্দ্র। বাকি টাকা ভাগ করে দেওয়া হবে রাজ্যগুলির মধ্যে। জানিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্যাকেজের অর্থে দেশের ৭৩৬ টি জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশুদের জন্য বিশেষ বিভাগ তৈরিরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কেনা হবে পর্যাপ্ত ওষুধ এবং চিকিৎসার সাজ-সরঞ্জাম। বিশেষ নজর দেওয়া হবে টিকাকরণের উপর। আগামী ৯ মাসে বিভিন্ন রাজ্যে ১০ লিটার অক্সিজেন স্টোরেজ সিস্টেমেরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে ভ্যাকসিন’ অভিযান। বর্ষাকে হার মানিয়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপের গ্রামে লঞ্চ-বোটে পৌঁছে যাচ্ছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঘরে ঘরে গিয়ে গ্রামবাসীদের টিকা দিচ্ছেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম-বাংলায়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ(বাংলাদেশ)এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.