করোনাকালে নবীগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের ‘মনগড়া বিল’ !

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: নবীগঞ্জ উপজেলায় পল্লীবিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল দিশেহারা গ্রাহক। ইচ্ছামত মনগড়া বিলে ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার গ্রাহকরা। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বাণিজ্যিক মিটার গুলোতে লকডাউনের কারণে দোকান পাট বন্ধ রাখলেও আগের মতই বিল তৈরি করা হয়েছে এবং দ্বিগুণ বিল তৈরি করা হয়েছে বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। তবে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বিলের বিষয়টি অস্বীকার করে করোনার কারণে গড় বিল তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এদিকে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীর উদাসিনতা ও মনগড়া বিল তৈরির মাধ্যমে ভোগান্তির শিখার হতে হচ্ছে তাদের। উপজেলার অধিকাংশ গ্রাহকের অভিযোগ, ‘বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের তুলনায় কিঞ্চিত উত্তরণ হলেও প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে মে মাসে মনগড়া ভৌতিক বিলের খড়গ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

নবীগঞ্জ পৌর এলাকার পূর্ব তিমির পুর গ্রামের গ্রাহক মোঃ হামদু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ফেব্রুয়ারী-মার্চ ও এপ্রিল এই তিন মাসের বিল যোগ করে তিন ভাগ করলে গড় বিল হয় ৪৬০ টাকা। অথচ মে মাসে অফিসে বসে গড় বিলের নামে আমার বিল করে দিয়েছেন ৯৯০ টাকা।

নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের আউশকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আহমেদ আজাদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের তুলনায় এই মাসে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল এসেছে।

গত মাসগুলোতে গড় হিসাব করলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা হয়। কিন্তু মে মাসে ততটা দোকান খোলা হয়নি, তবুও ও ১১ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। আমার আবাসিক মিটারে ও জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের গড় হিসাব করলে ৩ শত থেকে ৪ শত টাকা বিল এসেছে। কিন্তু মে মাসের বিল ১,৭০০ টাকা।

করোনার কারণে বাড়ি আসবে না বলে মিটার না দেখে বিল করেছে পল্লী বিদ্যুৎ। তবে বিলের কাগজ ঠিকই দোকান এবং বাড়ি বাড়ি বিলি করা হয়েছে। এটা একটা ধোঁকাবাজি। গড় বিলের নামে ডবল বিল করেছে তারা।

নবীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আহমদ রাজু বলেন, ২ মাস ২০ দিন দোকান বন্ধ রাখার পর বিদ্যুৎ বিল দুই মিটারে ২৭ হাজার টাকা এসেছে। পরে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করলে বিলের পরিমাণ ৯,৮০০ টাকা দাবি করা হয়। সচেতন মহল বলছেন, এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া।

একদিকে করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন বা সাধারণ ছুটিতে কর্মহীন ঘরবন্দি মানুষের আর্থিক ও খাদ্য সংকটে জীবন-জীবিকা নাভিশ্বাস। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিলে বিলম্ব মাসুল মওকুফসহ গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে সরকারি নির্দেশনাকেও মানছেন না।

গড় বিলের কথা বলে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি ভৌতিক বিলের বোঝা গ্রাহকের ঘাড়ে চাপিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ। সময়মত বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলেই লাইন বিচ্ছিন্ন করবে এবং পুনঃ সংযোগ দেওয়ার সময় গ্রাহকের আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে ভোগান্তিও রয়েছে। সীমাহীন এই ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির প্রতিকার চায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছে।

এছাড়া এসব ভুতুড়ে বিল সংশোধন করতে নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিসে এসেও হয়রানির শিকার হন গ্রাহকরা। সেই সঙ্গে সমিতির ভুল হওয়া সত্ত্বেও ডুপ্লিকেট ফি বাবদ কেটে নেওয়া হয় টাকা। সেই সঙ্গে অদৃশ্য কারণে ডিমান্ড চার্জের নামেও নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। গ্রাহকদের বছরের পর বছর মিটার ভাড়াও দেওয়া লাগে এমন অভিযোগের পাহাড় রয়েছে এ সমিতির বিরুদ্ধে।

তবে অতিরিক্ত ও মনগড়া বিলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার এজিএম রুহুল আমীন।

তিনি বলেন, করোনাকালে সরকারি নির্দেশনায় গড় বিল করা হয়েছে। তবে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে না। এমনকি মনগড়া কিছুই করা হচ্ছে না। গত মাসগুলোর তুলনায় মে মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে বেশি তাই বিল বেশি এসেছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি মোঃ আলাল মিয়া। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.