কমিউনিজম ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুসরণ

বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি: একসময়ে তিনি ছিলেন কট্টর কমিউনিস্ট। ডাকাবুকো সিপিএম নেতা, যাঁর দাপটে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খেতো। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন,মার্কসবাদ-লেনিনবাদ সর্বহারার মতবাদ। কিন্তু সময়ের হাত ধরে কঠোর বাস্তববাদ বদলে দিয়েছে তাঁর জীবনবোধকেই। গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাদর্শকে।
আজ তাই তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, সংগ্রামী চেতনার মূর্ত প্রতীক আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি লগনদেও সিং। কমিউনিজম ছেড়ে আজ তিনি জননেত্রীর প্রগতিপথের পথিক। এক সময়ের সিপিএমের অমূল্য সম্পদ লগনদেও এখন হাওড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যানের ভূমিকায়।
দীর্ঘদেহী লগনদেও সিং-এর হিম্যান ইমেজটাকে খুব সুকৌশলে সংগঠন প্রসারের স্বার্থে ব্যবহার করতো সিপিএম। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন নির্বাচনে পেশিশক্তির আস্ফালন দেখাতো তাঁকে সামনে রেখেই। উত্তর হাওড়ার দীর্ঘদিনের সিপিএম বিধায়ক লগনদেও সিং ছিলেন পূর্বভারতের গেটওয়ে বলে পরিচিত হাওড়া স্টেশন এলাকার শেষ কথা। কিন্তু কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক গোঁড়ামি অসহ্য মনে হতো তাঁর। পার্টির অন্ধ মমতা-বিরোধীতা মোটেই পছন্দ ছিল না তাঁর। বিরোধীপক্ষ হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখি কাজকর্মের তিনি প্রশংসা করতেন প্রকাশ্যেই। এই নিয়েই মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দুরত্ববৃদ্ধির শুরু। এবং কালক্রমে চিরবিচ্ছেদ। ২০২১ এ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের মুখেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা তুলে দেওয়া হয় লগনদেও সিং-এর হাতে।
সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর রাজনীতিতে কেমন অনুভূতি তাঁর? লগনদেওর স্পষ্ট মন্তব্য, ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতেই আমার তৃণমূল কংগ্রেসে আসা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সারাদেশে এব্যাপারে সঠিক পথ দেখাতে পারেন শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। শুধু তাই নয়, গরিব মানুষকে, সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে যে  আপসহীন লড়াই আমাদের নেত্রী চালিয়ে যাচ্ছেন, তাতে আমি সত্যিই অভিভূত।’
সমবায় ভিত্তিক জলপথ পরিবহনে দক্ষ প্রশাসক
রাজনীতির বাইরেও আর এক উজ্জ্বল অতীত আছে লগনদেও  সিং-এর। সমবায় আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জলপথ পরিবহনকে লাভজনকভাবে জনস্বার্থে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। ‘হুগলি নদী জলপথ পরিবহন সমবায় সমিতি’র চেয়ারম্যান হিসেবে কলকাতা-হাওড়া-হুগলি,উত্তর ২৪ পরগণা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণাকে গেঁথেছিলেন একই সূত্রে। কলকাতা-হাওড়া যমজনগরীর মাঝে গঙ্গার বুকে জন্ম দিয়েছিলেন এক বিকল্প যাত্রী-পরিবহন ব্যবস্থার। শুধু যাত্রী পরিবহনই নয়, বিনোদন এবং সেইসঙ্গে গঙ্গাসাগর ও সুন্দরবনের পর্যটন শিল্পেও নিখুঁতভাবে ব্যবহার করেছিলেন জলযানকে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছিল এই সমবায় সংস্থার মাধ্যমে। লাভের টাকায় ৮টি নিজস্ব ইস্পাতের লঞ্চ তৈরি করেছিল এই সংস্থা।  সাফল্যের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে দ্বীপরাজ্য গোয়া থেকেও বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন এই মডেল অনুসরণের বাসনা নিয়ে।
জলপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মডেল থেকে অনেক কিছু শেখার আছে বলে মনে করেন লগনদেও সিং।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন অভিযানে অংশ নিয়ে এখন নিজের রাজনৈতিক জীবনকে পূর্ণতা দেওয়ার প্রতীক্ষায় প্রাক্তন এই কমিউনিস্ট হেভিওয়েট।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর বিশেষ (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.